দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

| শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এতো আলোচনা আর এতো নির্দেশনার পরও যান্ত্রিক যানের চালকরা ন্যূনতম সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত সহজে মিলবে বলে মনে হয় না। বরং সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে।
গত ১১ জুলাই পটিয়ায় মহাসড়কে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু পটিয়ায় নয়, ঈদের ফিরতি যাত্রার সময় সারা দেশে প্রচুর প্রাণহানি ঘটেছে। এ সময় সড়কগুলো এতো বেশি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, যা খুবই বিপজ্জনক। চালকের অদক্ষতা এবং ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা যে বাড়ছে তা বলাই বাহুল্য। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, একজন যাত্রী ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা অথবা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড শেষ করে নিরাপদে ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটি ২০১৮’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচ থেকে ২৯ বছর বয়সসীমার মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে সংঘটিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনার একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সড়কে পাঁচটি মূল আচরণগত ঝুঁকির পরিবর্তন দুর্ঘটনা হ্রাসের সহায়ক হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত/দ্রুতগতিতে মোটরযান চালানোর বিষয়টি সম্পর্কিত। যদি গতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব। তেমনি মদ্যপ অবস্থায় বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে মোটরযান পরিচালনাও সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি আঘাতের তীব্রতা এবং সেই দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। যদি মদ্যপ অবস্থায় মোটরযান চালানো নিষেধ বিধানটি শতভাগ প্রয়োগ করা যায় তাহলে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস করা যাবে। হেলমেট পরিধান সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির উৎস নয় তবে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতে হার হ্রাসে ভূমিকা পালন করে। সঠিক হেলমেট ব্যবহারে দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে এবং মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে। সিটবেল্ট পরা চালক ও সামনের আসনে যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ৪৫-৫০ শতাংশ এবং পেছনের আসনের যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস করে। শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু যাত্রীদের বিশেষ করে বেশি ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ৫৪-৮০ শতাংশ মারাত্মক আঘাত পাওয়া এবং মৃত্যু হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকর।
বিশেষজ্ঞরা ঈদের ফিরতি যাত্রায় দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘ঈদের আগে যানজটের কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের গতি কম থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও বেশি থাকে। এ জন্য যাত্রী পরিবহন বেশি হলেও দুর্ঘটনার হার কম। কিন্তু ঈদের ফিরতি যাত্রায় সড়ক অনেকটাই ফাঁকা থাকায় চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ির গতি তোলেন। দ্রুত যাত্রী নামিয়ে পুনরায় যাত্রী ধরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এ ছাড়া দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ- চালকের ক্লান্তি। কেননা ঈদের আগে থেকে টানা গাড়ি চালান চালকরা। ফলে তারা বিশ্রামের সুযোগ পান না। চালক ও মালিক- দুপক্ষই বাড়তি আয়ের আশায় ঈদের আগে-পরে ১৫ দিন বিরামহীন বাস চালিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় নগর পরিবহনের অনেক ফিটনেসবিহীন বাস দূরপাল্লায় চলাচল করে। এসব যান কারিগরিভাবে ত্রুটিযুক্ত থাকে ও চালকও অদক্ষ হন। এ জন্যই ঈদের সময় প্রাণহানি বেশি।’
সড়কে যান চলাচলব্যবস্থায় দূর করতে হবে সমস্ত বিশৃঙ্খলা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সড়কে গতি নিয়ন্ত্রণে তদারকিও জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে