ব্রহ্মই আদ্যাশক্তি জগৎজননী দেবী দুর্গা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত জীবের দুর্গতিহরণ করার জন্য আবির্ভাব হয় দেবী দুর্গার। দেবতাদের সম্মিলিত তপস্যা ও জ্যোতি থেকে সৃষ্ট আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গা নাম ধারণ করে ধরাধামে আসেন। ভক্ত সাধকরা দেবী দুর্গাকে মাতৃজাতির প্রতীক করুণাময়ী বলে তাঁকে নারীমূর্তিতে কল্পনা করেছেন। সনাতন ধর্ম মতে, বস্তুত যিনি ব্রহ্ম, তিনিই শক্তি। তিনিই দেবী দুর্গা। দুর্গাপূজা মূলত শক্তির আরাধনা।
এর দর্শনটি হল, দুর্বলের কোনো আত্মজ্ঞান হয় না। জীবনে আত্মিক প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য চাই শক্তির সাধনা। আর ব্রহ্ম পরিপূর্ণতা লাভ করেন শক্তিতে। শক্তির পরিপূর্ণতার রূপায়ণ ঘটে জগৎ সৃষ্টিতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা মহা শক্তিরই প্রতীক। সেই মহাশক্তিকেই আমরা প্রতিমার মধ্য দিয়ে চিন্ময়ী ব্রহ্মশক্তিকে দর্শন করি। তাই এই পূজা প্রতিমাকে পূজা করা নয়, প্রতিমাতে পূজা করা। চিকের আড়ালে যিনি আছেন, তিনি মহাশক্তি দেবী দুর্গা। হে দেবী, তুমি জাগো, তুমি জাগো, তুমি জাগো। তোমার আগমনে এই পৃথিবীকে ধন্য কর। কলুষতা মুক্ত কর। মাতৃরূপে, বুদ্ধিরূপে, শক্তিরূপে আশীর্বাদ কর পৃথিবীর প্রতিটি জীবকে। বিনাশ কর আমাদের অসুর প্রবৃত্তিকে। পৃথিবীতে শুভ–অশুভর যুদ্ধ চলছে প্রতিনিয়ত। আমরা সনাতনীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে চরম ভুলে পতিত হচ্ছি। সার্থিক পূজার বদলে তামসিকতাটাকে বেছে নিচ্ছি। মায়ের প্রতিমা মায়ের আদলে তৈরী করছি না। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে আমরা সাধনা থেকে দূরে পর্যবসিত হচ্ছি। সাধনার মহাযুদ্ধে জয়ী হতে পারলেই মানুষ মহাশক্তি দুর্গার সন্ধান পান। সাধনার দশম স্তরে উন্নীত হতে পারলেই পরমবিদ্যা মহাশক্তির নাগাল পাওয়া যায়। মানুষ এ স্তরে আসতে পারলেই অপরাজিত হন অন্তরাত্মার যুদ্ধে। এ যেন দশমীর মহাদশা যা মানুষ কখনও ভুলতে পারে না। পরাশক্তির অধিকারী অসুরকে বধ করার জন্য মা দুর্গা দশ হাতে দশ অস্ত্রে সুসজ্জিত তার দশ হাত দশদিক রক্ষার প্রতীক। মূলে তিনি এক পরমাবিদ্যা স্বরূপিনী, যিনি সর্বভূতের প্রাণরূপী মহা দিব্য মূর্তি মা ও জগৎ মঙ্গলময়ী দুর্গা। গোলোকপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সেই হিসেবে দেবী দুর্গা পরম বৈষ্ণবী এবং সত্ত্ব গুণের আধার। আমরাও মায়ের চরণকমলে প্রণতি জানিয়ে পৃথিবীর সকল জীবের অনাবিল শান্তির প্রার্থনা করি।