খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম জনপদ লক্ষ্মীছড়ি। উপজেলা সদরের অদূরে হাজাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা কমলা দেবী চাকমা। নেটিভ চিকেন বা দেশি মুরগি পালনে তার পরিবারে আর্থিকতা সচ্ছলতা এসেছে।
সরেজমিনে হাজাছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কমলা দেবীর উঠানজুড়ে দেশি মুরগির বিচরণ। নিজের লালন পালন করা এসব মুরগি এখন সংসার চালানোর অন্যতম অবলম্বন। প্রতি তিন মাস অন্তর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি করেন তিনি। ঘরে বসেই এই টাকা উপার্জন করছেন। তাতে এসেছে সচ্ছলতা।
কমলা দেবী চাকমা বলেন, ঘরের আশেপাশে খোলা জায়গায় দেশি মুরগি পালন করি। এসব মুরগি সম্পূর্ণভাবে ঘরোয়া খাবারের ওপর নির্ভরশীল। বাজারের প্যাকেটজাত খাদ্য দিতে হয় না। চালের খুদ, ধানের কুড়া খাওয়ানো হয়। প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত বেড়ে ওঠে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হয় সাড়ে ৪শ টাকায়। বাজারে গিয়ে বিক্রি করার ঝামেলা নেই। বাড়িতে এসে বেপারিরা কিনে নিয়ে যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৬ হাজারের পরিবারের মধ্যে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার পরিবার এখন নেটিভ চিকেন বা দেশি মুরগি লালন করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। জুম চাষ কমে আসায় এই জনপথের মানুষের আর্থিক অবলম্বন অনেকটা ঘরোয়াভাবে মুরগি পালনের ওপর নির্ভরশীল। পাহাড়ে কৃষিজ উৎপাদন সীমিত হওয়ায় অনেকে দেশি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
হাজাছড়ি গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুভাষ চাকমা প্রায় দুই বছর ধরে দেশি মুরগি পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেশি মুরগি পালন করছি পরিকল্পিতভাবে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে মুরগি বাজারে বিক্রি করি। প্রতি চার মাসে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি করি। এই টাকা দিয়েই পরিবারের ব্যয় বহন করি।
বেসরকারি লিন প্রকল্পের আওতায় উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। উপজেলার চাইল্যাতলী গ্রামের বাসিন্দা প্রীতিময় চাকমার বাড়িতে এখন দেশি মুরগির সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। তিনি জানান, আগে এতটা লাভজনক ছিল না। লিন প্রকল্প ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। এখন উৎপাদন বেড়েছে। বাজারের দেশি মুরগির দামও বেশি। যেহেতু এসব মুরগি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে তাই পালনের ব্যয় কম। লাভ বেশি হয়।
লিন প্রকল্পের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ফ্যাসিলেটর অনির্বাণ চাকমা বলেন, সরকার যে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা করেছে সেটা বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি। লিন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে খামারিদের আমরা মুরগির ঘর করে দিচ্ছি এবং মুরগির বাচ্চাও দিচ্ছি। তাদের উৎপাদন বেড়েছে, আয়ও বেড়েছে।
খামারিদের নেটিভ চিকেন পালনের পুরো কাজের সমন্বয় করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সূপর্ণা দেব শিম্পু। তিনি বলেন, দুর্গম লক্ষ্মীছড়িতে নেটিভ চিকেনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। পার্বত্য এলাকা দেশি মুরগি পালনের উপযোগী। দেশি মুরগি কম খরচে উৎপাদন করতে পারছে, বিক্রি করতে পারছে। তারা লাভবান হচ্ছে। লিন প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিরা কীভাবে দেশি মুরগির উৎপাদন বাড়াবে তার রূপরেখা দেয়া হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। খামারিদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। অল্প পুঁজিতে অল্প খরচে দেশি মুরগি উৎপাদন করছে। বিক্রির পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টির চাহিদাও মিটাচ্ছে পরিবারগুলো। এটা প্রত্যন্ত এলাকা। মুরগি পালন করে মেয়েদের হাতে টাকা আসছে। নারীরা লাভবান হচ্ছে। এটি নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কমলা দেবী চাকমাদের মতো অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছে।