দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা

নেপথ্য কারিগর চাম্বলের কৃষক জাকির

বাঁশখালী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকা চাম্বল ইউনিয়নের সোনারখীল নতুন পাড়ায় অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে ১০টি বন্দুক ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম। এ অভিযানে অস্ত্র তৈরির মূল কারিগর জাকির হোসেনকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। জাকিরকে একজন সাদামাটা কৃষক হিসেবে জানলেও বাস্তবে তিনি যে একজন অস্ত্র তৈরির কারিগর স্থানীয়রা তা জানলেন র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তারের পর। গতকাল বুধবার দুপুরে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ। তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বাঁশখালীর নতুনপাড়া এলাকায় আব্দুর রহমানের টিনের দোচালা ঘরের ভেতর কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য ও দেশীয় অস্ত্র তৈরি করে ক্রয়-বিক্রয় করছে। তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে একটি দল অভিযান চালিয়ে বাঁশখালী জঙ্গল চাম্বলের মৌলভী নুরুল হুদার পুত্র জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় ঘরের ভেতর সাদা প্লাস্টিকের বস্তা থেকে ৮টি ওয়ান শুটারগান, ২টি টু-টু বোরের পিস্তল এবং অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার জাকির জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। একটি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ক্যাটাগরি ভেদে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য ধরে থাকে। একটি ছোট ওয়ানশুটার গান জাতীয় অস্ত্র প্রস্তুত করতে ৫/৬ দিন সময় লাগে। স্থানীয় সূত্র
ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আটক জাকির ৭-৮ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মাঝে লোক-দেখানো কৃষি কাজ করতেন।
জাকির আরো জানান, তারা মূলত ২ জন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরি করতেন। একটি অস্ত্র প্রস্তুত করতে প্রকারভেদে তাদের ৫ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো। অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে এই ভাড়া করা বাড়িটিতে নিয়ে এসে কাজ করতো। প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা তারা ক্রয় করতো। পরবর্তীতে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল। একটি অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তারা গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রডকার্টার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্র র‌্যাব-৭ কারখানাটি থেকে উদ্ধার করে। যন্ত্রসমূহ পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে তারা তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাঁশখালী থানায় হস্তান্তরসহ মামলা করা হবে বলে জানায় র‌্যাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতদন্তে মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধবাস ভাড়া কমল ৫ পয়সা