অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে দেখা দিয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। চট্টগ্রাম ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর বহু সড়কের বেহাল দশা। যখন তখন যত্রতত্র ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এখন নগরবাসীর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমন বেপরোয়া খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ আছে,একটি রাস্তা খোঁড়া শেষ হতে না হতেই আরেকটি রাস্তা কাটা শুরু হয়ে যায়। একই রাস্তা বারবার কাটারও অভিযোগ করেছেন অনেক নগরবাসী। রাস্তা কাটার মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা বা নিয়ম মানছে না এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। রাস্তার পাশেই রাখা হচ্ছে রাস্তা কাটার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বলা বাহুল্য যে, নগরীর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও জনদুর্ভোগ লাঘবে ইতোপূর্বে ‘সড়ক খনন নীতিমালা’ প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেই নীতিমালায় বলা হয়, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি পরিহার করতে হবে। তবে এ নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সড়কে অবাধে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে প্রায় সব এলাকাতেই সড়কে নেমে নাজেহাল হতে হচ্ছে নাগরিকদের। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, দুর্ভোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–১ এর সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাইপলাইনের কাজের জন্য সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা। প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও পথচারীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) হস্তান্তরের সাথে সাথে মেরামত করা হলে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমে আসবে বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
সরেজমিনে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিনপোলের মাথা, পাঠানটুলী রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পাইপলাইনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় সড়কে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে ধীরগতির কাজ ও দ্রুত মেরামত না করার কারণে এলাকাবাসী কষ্টে আছেন।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট–১–এ পাইপলাইনের কাজের জন্য নগরীতে পর্যায়ক্রমে ২০০ কিলোমিটার সড়ক কাটা হবে। হালিশহর ক্যাচমেন্ট–১ এর কাজের জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ৯৩ কিলোমিটার সড়ক কেটেছি। এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার সড়কে কাজ শেষে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করে দিয়েছি। সড়ক কর্তনের জন্য এ পর্যন্ত চসিককে ৮২ কোটি টাকা দিয়েছি। যখন যেটা হস্তান্তর করছি সেটা চসিক সাথে সাথে সংস্কার করলে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমে আসবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই ২০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাদেরকে ১৩০ কোটি টাকা দিতে হবে। ২০২১–২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য ১৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন সেটা অনেক বেড়ে গেছে। চসিকের নতুন হিসাব অনুযায়ী এখন ২০০ কোটি টাকার মতো দিতে হবে। সড়ক কাটার ব্যাপারে এখন চসিকের সাথে নিয়মিত সমন্বয় সভা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আসলে চট্টগ্রামে অনেকগুলো সেবা সংস্থা কাজ করে। নিজেরা নিজেদের মত প্রকল্প আনছে আর ঢাকঢোল পিটিয়ে বাস্তবায়ন করছে। কেউ রাস্তা তৈরি করছে আর আরেক সংস্থা এসে তা কাটছে। কোনো সমন্বয় নেই। তাহলে তো উন্নয়নের সুফল আসছে না। এভাবে চলতে পারে না।
আসলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতটুকু জানি, ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভাগুলোতে সেবাসংস্থার দায়িত্বশীল কেউ না এসে তাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। ফলে অগ্রগতিও হয় নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য মেয়রকে অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাও দিতে হবে। শহরটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, সেহেতু সিটি মেয়রকে এর দায়িত্ব দেওয়া শ্রেয়। নগরের ভেতরে যে কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মেয়রকে অবহিত করতে হবে। সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করা হয়। বাস্তবে একাধিক সংস্থা কাজ করতে গিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হোক। সাধারণ মানুষের দুর্গতি রোধে অতি দ্রুত খোঁড়াখুড়ির কাজ শেষ হোক–সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।