তাহেরা বেগম
গত ২৬, ২৭, ২৮ জানুয়ারি হয়ে গেলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টাদশ ব্যাচের বন্ধুদের মিলন মেলা। সেই অষ্টাদশ যেনো সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে ষাটে এসেও সেই অষ্টাদশই রয়ে গেছে। অসীম প্রাণবন্ত, আনন্দে উচ্ছ্বসিত দুইদিনের অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম। বন্ধুদের বন্ধু হয়ে আমিও আমন্ত্রিত ছিলাম। বন্ধুরা সুদূর আমেরিকা, ভারত, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনা পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে কক্সবাজারে এই মিলন মেলায়। হোটেল কল্লোল, উপোল, মিডিয়া যেনো ভেসে গেছে জনঅরণ্যে।
অষ্টাদশের দুরন্ত যৌবন যেনো দুরন্তপনায় মেতেছে। বন্ধু, পরিবার, অতিথি সহ ৫০০জনের বিরাট পরিবার। এত সুন্দর আয়োজন উপহার দেয়া সত্যিই কৃতিত্বের দাবিদার তারাই –যারা এই অনুষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদের পরিচালনায় সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল অনবদ্য। তাঁর হাতে কিছু কাগজসহ ফাইল ছিল। অথচ তিনি ফাইল না দেখেই পরবর্তী অংশগ্রহণকারীর নাম এবং বিষয়ের নাম অবলীলায় বলে যাচিছলেন। আচ্ছা উনি রাতে বসে বিষয়গুলি মুখস্থ করেছিলেন? ফাইন আর্টসের বন্ধু আবদুল হালিম মন্টু এসেছেন ঢাকা থেকে। ওনার উপস্থাপনাও ছিল সাবলীল। তবে নির্ঝরের স্বপ্ন ভগ্ন কবিতার সাথে তার নৃত্য ছিল অতুলনীয়। শুধু কবিতাই নয় গানের সাথেও তার নৃত্য ছিল সুন্দর দুটি সন্ধ্যাই পেশাদার শিল্পীরা গানে গানে মাতিয়েছে চারদিক। শিল্পী বন্ধু দের গাওয়া গানের সাথে উৎসবের বন্ধু দের নৃত্য যেন দুরন্ত অষ্টাদশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। বন্ধু জাহিদের জারী গান ছিল মনে রাখার মতো। আঞ্চলিক গান আর পুরানো দিনের গান ভুলবার মতো নয়। গানের মাঝে মাঝে চলছিলো আড্ডা আর স্মৃতিময় আবেগ। অষ্টাদশী অনেকের আবেগময় স্মৃতিময় কথাগুলো অনেককে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। এই অনুষ্ঠানে আমারও কবিতা পাঠ করার সুযোগ করে দেয় বন্ধুরা। কাঁপা কাঁপা পায়ে আমি স্টেজে উঠলাম দুরু দুরু বুকে। টেনশানের সাথে আবৃত্তি করলাম। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। আমি এতটা আশা করিনি। সবাই খুবই মন দিয়ে শুনলেন। কবিতার প্রেক্ষাপটও যেনো মিলন মেলার সাথে মিলে গেলো। কবিতার শেষে বিপুল করতালি আমাকে প্লাবিত করলো। স্টেজ থেকে নেমে আমি যখন অডিয়েন্সের দিকে যাচ্ছিলাম তখন সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি জীবনের বড় প্রাপ্তি পেয়ে গেছি। অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন ছিলো অপূর্ব। খাবারের স্পন্সরও ছিলেন বন্ধুরাই কেও কেও। খাবারের সময় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের আপ্যায়ন ছিল আন্তরিক। সবশেষে ছিল রাফেল ড্র আর গিফট প্রদান। কিছু বন্ধুর তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ছিল দুটি সুন্দর দিনের উপহার।