দুবাই থেকে ফিরে স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ার এক নারীকে বৈবাহিক প্রতারণার মাধ্যমে আরব আমিরাতের দুবাই শহরে পাচার ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) চট্টগ্রাম মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস আলেয়ার আদালতে মামলার আবেদন করলে, আদালত ভিকটিমের জবানবন্দী গ্রহণপূর্বক মামলার আবেদনটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্যের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ওই নারীর স্বামী এইচএম কাউছার উদ্দিন (৩৫), শামিমা আক্তার (৩০), মোহাম্মদ হোসেন (৩২) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪৭) ছাড়াও আরও ৪ থেকে ৫ জন জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাড. জিয়া হাবীব আহ্‌সান বলেন, ওই নারীকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে স্বামী এইচএম কাউছার উদ্দিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করে সাতকানিয়া থানাকে সরাসরি এফআইআর হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি ভিকটিম ন্যায় বিচার পাবেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, সাতকানিয়া থানাধীন রূপনগর গ্রামের জনৈকা ২১ বছর বয়সী কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী বাঁশখালীর দক্ষিণ বরুমছড়া গ্রামের মো. আবুল ফজলের পুত্র এইচএম কাউছার উদ্দিন (৩৫)। তার পক্ষে একই ঠিকানার মোহাম্মদ আলভীর স্ত্রী শামিমা আক্তার (৩০), ওমর আলীর পুত্র মোহাম্মদ হোসেন ও আবুল ফজলের পুত্র জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো ৪/৫ জন মিলে ভিকটিমের অভিভাবকদের মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই সিটিতে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি করান। পরে ৮ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্যে ২০২২ সালের জুন মাসে বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি হয়। অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে পাসপোর্ট করে ভিকটিমকে তার স্বামী প্রবাসী কাউছার উদ্দিন ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুবাই নিয়ে যান। দুবাই সিটির ইতালি ক্লাস্টার ১ নামীয় ভবনের একটি নির্জন ফ্ল্যাটে তাকে একাকী রেখে বন্ধু পরিচয়ে অজ্ঞাত দেশি বিদেশি পুরুষের সাথে থাকতে ভিকটিমকে বাধ্য করা হয়। এতে তিনি সম্মত না হওয়ায় তার মোবাইল কেড়ে নেয়া হয় এবং মারধর করে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিম লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলে প্রতিবেশীরা তাকে তালা ভেঙে উদ্ধার করেন। বিষয়টি ফ্ল্যাটের আশপাশের লোকজন জেনে গেলে তাদের চাপের মুখে আসামি এইচএম কাউছার উদ্দিন ভিকটিমকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দেশে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন।

ভিকটিম চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া মামলার অপরাপর আসামিরা তার হাতে থাকা পাসপোর্টসহ কাগজপত্র কেড়ে নেয় এবং তাকে এসব প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ভিকটিমের অভিভাবকগণ বিষয়টি বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনসাতকানিয়া শাখার সভাপতিকে জানালে তথ্যানুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার পরামর্শে মানবপাচার আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলা দায়েরে ভিকটিমকে আইনি সহায়তা প্রদান করছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাইন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। ভিকটিমের পক্ষে মামলা পরিচালনায় অংশ নেন বিএইচআরএফ মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্‌সান, সুনীল কুমার সরকার, এএইচএম জসীম উদ্দিন, সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, মো. সাইফুদ্দিন খালেদ, মো. হাসান আলী, মো. বদরুল হাসান, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন (আরমান) ও কে এম শান্তনু চৌধুরী প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোটরসাইকেল আর মেরামত করতে পারলেন না মুন্না
পরবর্তী নিবন্ধঅভিযানেও কমছে না খেজুরের দাম