দুদিন বন্ধের পর সীমান্তে ফের গোলাগুলি

আতঙ্কে বাসিন্দার

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

দুদিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে থেমে থেমে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ আসছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশাফাঁড়ি, আমতলী ও গর্জনবুনিয়া সীমান্তে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের ওপারে দুদিন ফায়ারিং বন্ধ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে সীমান্তের আকাশে কোনো হেলিকপ্টার বা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়নি। সীমান্ত এলাকাবাসী আপাতত যার যার ঘরে অবস্থান করছে। সীমান্তজুড়ে এখনও বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম ও সিএনজি টেঙির লাইনম্যান নুরুল আবছার জানান, গত ৩ আগস্ট সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছিলেন তারা। ওইদিন বাইশাফাঁড়ি সীমান্তে দুটি মর্টার শেল পড়েছিল। কিন্তু এরপর দুদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকার ফলে সীমান্তের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। এখন মানুষের মাঝে আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সীমান্তে বিদ্রোহী দমনে ১ মাস ৬ দিন ধরে গোলাগুলি ও মিয়ানমারের সেনাদের মর্টার শেল নিক্ষেপ করায় উত্তেজনা ও আতংক বাড়ছিল। ২৮ আগস্ট ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর পাড়ায় দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর আরও দুটি শেল পড়ে বাইশাফাঁড়িতে। সেদিন ২টি হেলিকপ্টার ও ১টি যুদ্ধবিমান ৪০ ও ৩৯ নম্বর পিলার এলাকায় গোলা নিক্ষেপ করলে ঘুমধুমসহ সমগ্র এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটা উসকানিমূলক না। এটা স্ট্রে (আকস্মিক চলে এসেছে)। এরপর ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর দুদিন গোলাগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। গতকাল সকাল থেকে আবার গোলাগুলি শুরু হয়। এ নিয়ে নতুন করে আতংকে আছে স্থানীয়রা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি সূত্র জানায়, তারা সতর্ক আছে। টহল জোরদার আছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশমিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের মংডুর ৩৮ নং সীমান্ত পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনের বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে তুমুল সংঘর্ষ চলছে।

বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ইসলাম গতকাল দুপুরে বলেন, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আমাকে সকাল থেকে গোলাগুলির খবর জানিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব জরুরি না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তারা যেন ঘরের ভেতর থাকেন। বাচ্চাদের ঘরে রাখেন। অনেক সময় দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর বনে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে যান এবং সেখানে পাহাড়ের ঢালে অনেকে জুম চাষও করে থাকেন। যেহেতু সেখানে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে, তাই আপাতত তাদেরকে এসব কাজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকও গোলাগুলির তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, গত দুদিন গোলাগুলির বন্ধ থাকার অনেকে শিক্ষার্থী স্কুলে আসছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে আবার গোলাগুলি শুরু হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা সীমান্তের ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পারছে। আমরা সবাইকে প্রতি মুহূর্তের আপডেট জানানোর জন্য বলেছি এবং সংঘাতপ্রবণ সীমান্ত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছি। এলাকায় বিজিবির টহল চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গোটা পরিস্থিতিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা ৬২১টি পরিবারে চার হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এখনও তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ার শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। গোলাগুলির কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে কোভিডের নতুন উপধরন শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধরামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করলেন হাসিনা ও মোদী