লকডাউনে দুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বর্ধিত ভাড়া ও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নগরীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন চলাচল করেছে। এতে অফিসগামী মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। কাকডাকা ভোর থেকেই সড়কে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনের পাশাপাশি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত টেক্সি, হিউম্যান হলার, ভ্যানগাড়ি ও রিকশা অবাধে চলাচল করছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও গত দুদিনের তুলনায় বহুলাংশে বেড়েছে। কোথাও কোথাও যানজট দেখা গেছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে ৫ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে লকডাউন শুরু হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই নগরীতে ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন পালিত হতে দেখা গেছে। গত বছর সাধারণ ছুটি চলাকালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে পরিবহন ও মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেলেও এবার তা অনুপস্থিত। লকডাউনের ফলে জীবন ও জীবিকার উপর আঘাত সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি মানুষ। তাই লকডাউনের নির্দেশনাও মানতে দেখা যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় বুধবার থেকে গণপরিবহন চলবে। তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে নগরীতে চলাচল করা গণপরিবহনগুলোতে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এছাড়া বেশির ভাগ চালক-হেলপারের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক। দ্বিগুণ ভাড়া আদায় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন যাত্রী-চালকরা। যাত্রীদের অভিযোগ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক ব্যবহারের কথা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ নামমাত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দায় সারছেন।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সালেহ আহমেদ আজাদীকে বলেন, আগের দিনের মতো কষ্ট না হলেও ভাড়া নিচ্ছে ডবল। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে। এমনকি দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। গতকাল বিকেল চারটার দিকে লাভলেইন মোড়ে একটি মিনিবাসে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী বসানো হয়েছে। তবে দাঁড়িয়েও কিছু সংখ্যক যাত্রী তুলেছে বাসটি।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে চকবাজারের বাসিন্দা শিমুল হোসেন বলেন, রাস্তায় বাস চলাচল শুরু করায় ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। কিন্তু ভাড়া নিয়ে আমরা সাধারণ যাত্রীরা রীতিমত বিপাকে পড়ছি। ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল ৬০ শতাংশ। অথচ তারা আমাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই খারাপ আচরণ করছে। আগে চকবাজার থেকে রাস্তার মাথায় ভাড়া ছিল ৮ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। একইভাবে অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত বাস বা টেম্পোর ভাড়া ছিল ৭ টাকা। সেখানে এখন আদায় করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। মুরাদপুর থেকে কাজির দেউড়ি পর্যন্ত হিউম্যান হলারে ভাড়া ছিল ৬ টাকা। এখন বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। তবে মৌমিতা জান্নাত নামে এক যাত্রী বলেন, ভাড়া বেশি হলেও অন্তত কোনো কাজে বাসা থেকে বের হলে গণপরিবহন পাওয়া যাচ্ছে। এটা স্বস্তির বিষয়। পরিবহন বন্ধ থাকলে কিছুই করা যায় না। রবিউল ইসলাম নামে অফিসগামী এক যাত্রী বলেন, অবশেষে কষ্টের অবসান হলো। গত দুদিন অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে অনেকটা যুদ্ধে নামতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, বুধবার থেকে মহানগর এলাকায় স্বাস্থবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল করার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু চালক সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নগরীর বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাত্রী পরিবহন করছেন। গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করছেন। তিনি বলেন, নগরীতে অনেক বাসে আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায় এবং বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। যার ফলে কয়েকজন বাসচালককে অর্থদণ্ড ও সতর্ক করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালন করে।