দুদিন পর নামল কিছু বাস বাড়তি ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

গণপরিবহনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ঠিকই ছিল গতকালও। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল রোববার বাস-হিউম্যান হলারসহ কিছু
গণপরিবহন নগরীর রাস্তায় নেমেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। নগরী ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের গণপরিবহনগুলো যাত্রীদের থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দূরপাল্লার কিছু বাসও ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে প্রকাশ্যে দূরপাল্লার বাসের কোনো টিকেট বিক্রি হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঢাকা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। গতকাল রোববারও দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি টেঙি আর ব্যক্তিগত গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন যাত্রীরা। একজনের সিটে দুইজন বসিয়েও যাত্রী নিতে দেখা যায় অনেক গাড়িতে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধের অজুহাতে বেড়ে যায় রিকশা-সিএনজি টেঙির ভাড়াও। সকাল থেকে চলাচল শুরু হলেও সড়কে বাসের সংখ্যা ছিল কম। সীমিত সংখ্যক বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর যাত্রীরা রীতিমতো যুদ্ধ করে লোকাল বাসে উঠছেন। কিন্তু গাড়িগুলো যাচ্ছে অর্ধেক গন্তব্যে। যেসব বাস চলাচল করেছে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছে। আগে যেখানে পাঁচ টাকা নিতো সেখানে ১০ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। চলছে বিআরটিসির বাসও। লোকাল বাসের হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে চলছে বাকবিতন্ডা।
নগরীর জামালখান থেকে আগ্রাবাদে যাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিয়েছে। এ হিসেবে ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
নগরীর ২ নম্বর গেট থেকে দেওয়ানহাট যেতে ১৫ টাকা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলে বেসরকারি চাকরিজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে বাসের হেলপাররা মর্জিমাফিক ভাড়া আদায় করছে। ৮ টাকার ভাড়া যদি ১৫ টাকা আদায় করে এটা মেনে নেয়া যায় না। যে যার যার মত যা ইচ্ছা তাই করছে।
নগরীর হালিশহর থানাধীন ঈদগাঁ এলাকা থেকে ইপিজেড যাতায়াত করেন পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, অন্য সময় ১৫০ টাকা দিয়ে ইপিজেড আসি। কিন্তু আজ আড়াইশ টাকা দিয়ে এসেছি। নিয়মিত ভাড়া দিয়ে আসার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কেউ ওই ভাড়ায় আসতে রাজি হয়নি।
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, জিইসি থেকে আগ্রাবাদ ভাড়া ৭ টাকা। অথচ আজ (গতকাল)১০ টাকা নিলো। রিকশা, সিএনজি টেঙিগুলোতেও একই অবস্থা। কোথাও স্বস্তি নেই।
নগরীর দেওয়ানহাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, দেওয়ান হাট থেকে জিইসি পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচ টাকা দিয়ে যেতাম। আজ (গতকাল) ১০ টাকা নিয়েছেন বাসের স্টাফ। তারা বলছেন, বাসে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া।
রোববার সকালে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে কঙবাজারের উদ্দেশে কয়েকটি বড় বাস চট্টগ্রাম ছাড়তে দেখা গেছে। ওই এলাকায় দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও টিকেট বিক্রি বন্ধ দেখা গেছে। তবে যেসব বাস কঙবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়ছে সেগুলোকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। দূরপাল্লার এসব বাসের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো কঙবাজারে যাচ্ছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে অন্তত ১০০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বাস এবং হিউম্যান হলার নগরীতে আসতে দেখা গেছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা থেকে আসা বাসের যাত্রীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে অন্তত ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে আসা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকেও অন্তত ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম শহর থেকে যেসব বাস ও হিউম্যান হলার এসব উপজেলায় যাচ্ছে, তাদের কাছ থেকেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বাঁশখালীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন, বাসে ওঠার সময় বলে দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকেই উঠি কিংবা নামি, ভাড়ার সঙ্গে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। আমাদের কর্মস্থলে যেতে হবে, কোনো উপায় নেই।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা আজাদীকে বলেন, ভাড়া ৮-১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ উপজেলা থেকে নগরীতে যেসব বাস-হিউম্যান হলার চলাচল করছে, তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। তবে আমরা শ্রমিকদের বাড়তি ভাড়া নিতে নিষেধ করেছি। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর যেটি নির্ধারণ হয় সেটাই যেন নেওয়া হয়, এমন নির্দেশনা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া আছে।
প্রসঙ্গত সরকারি সিদ্ধান্তে বুধবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার পরিবহন চালানো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় সারা দেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সকল বাস এবং এর সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরাসরি যাওয়া দূরপাল্লার বাস চলাচল শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম নগরীতে রিকশা ও সিএনজি টেঙি ছাড়া সকল ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার্থীদের স্পট এসেসমেন্ট ১১ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধচশমা ভেঙে শিক্ষার্থীর চোখে ঢুকল কাচ