তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়াচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ। গত দুদিনে উপগ্রুপ সিএফসি ও সিঙটি নাইনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত ছয়বার। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার সভাপতি রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন সিএফসির একাংশের সঙ্গে উপগ্রুপ বিজয়ের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মূলে রয়েছে বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার হাটহাজারীতে একটি অনুষ্ঠানে যান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এসময় নেতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপের নেতাকর্মীরা। গ্রুপ দুটি হলো শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নেতৃত্বাধীন সিএফসি ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের নেতৃত্বাধীন বিজয়। দুটি গ্রুপই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নফলের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা ও পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেই। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরাই একে অপরকে কিলঘুষি ও লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে। এসময় ইলিয়াসের কর্মীরা রুবেলকে ধাওয়া দিলে তিনি ঘটনাস্থল থেকে সরে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
একইদিন সন্ধ্যায় গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার জেরে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপ সিএফসি আর সিঙটি নাইন। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি উভয় পক্ষকে শান্ত করে হলে পাঠিয়ে দিলেও দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুক্রবার সারাদিন শাহজালাল হল ও শাহ আমানত হলে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করার পর সন্ধ্যায় আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই হলে থাকা দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ কমিটি বিলুপ্তির জন্য নানা সময় দাবি জানিয়ে আসছিলো। বর্তমান সভাপতি রেজাউল হককে অবাঞ্চিত ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করেছে কয়েকবার। কমিটি বিলুপ্তির জন্য উপর মহলেও নানা তোড়জোড় করছে পরবর্তী পদ প্রত্যাশীরা। কিন্তু কোনো কিছু কাজে না আসায় সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছে তারা।
এ ঘটনায় শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এ সময় বেশ কিছু দেশি অস্ত্র, রড ও ক্রিকেট স্টাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ অভিযান। এসময় শাহ আমানত হল থেকে পাঁচ বহিরাগতকে আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস তার অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের উপ–আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নয়ন চন্দ্র মোদককে ফোন করতে বলেন। এ বিষয়ে নয়ন চন্দ্র মোদক বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের নিয়ে নওফেল ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেখানে রুবেল বহিরাগত কিছু ছেলে নিয়ে আমাদের ছেলেদের নানাভাবে টিজ করতে থাকে। যার ফলে আমাদের ছেলেরাও উত্তেজিত হয়ে যায়। এরপর দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমি নওফেল ভাইয়ের সাথে দেখা করে চলে আসছি। এরপর হয়ত হাতাহাতি হয়েছে।
এসব বিষয়ে শাখা সিঙটি নাইনের নেতা সাঈদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কালকের (বৃহস্পতিবার) ঘটনা মিটমাট হয়ে গেছে। শুক্রবার বিনা উস্কানিতে আমানত হলের ছাদ থেকে আমাদের ছেলেদের ওপর ইট ছুঁড়েছে। এরপর আমাদের ছেলেরা পাল্টা আক্রমণ করেছে। এটা নিয়ে আর বসা হয়নি। আমরা সমাধানে যাবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, গতকালের ঘটনার জেরে আজকেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকালও আমরা শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। আজকেও ঘটনার শুরু থেকে প্রক্টরিয়াল বডি এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হলে তল্লাশির বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু দেশীয় অস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচজন বহিরাগতকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।