অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের পরিত্যক্ত সরকারি জমি আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণের জন্য ‘দি চিটাগাং কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’–এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক ২৮ কর্মকর্তাকে তলব করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গতকাল রোববার হাজির হয়েছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. কপিল উদ্দিন ইউসুফ।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, ২৩ মার্চ (গতকাল রোববার) হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য দি চিটাগাং কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ–এর সাবেক ২৮ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ কর্মকর্তাদের একজন ইঞ্জিনিয়ার মো. কপিল উদ্দিন ইউসুফ আজকে (গতকাল) হাজির হয়েছেন। তবে তিনি বক্তব্য দেননি। আগামী ৬ এপ্রিল তিনি লিখিত বক্তব্য প্রদান করবেন। বাকিরা হাজির হননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দুদক সূত্র জানায়, ২৮ কর্মকর্তার মধ্যে ১২ কর্মকর্তা ৩০ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান ও কোষাধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদও রয়েছেন। আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে তাদেরকে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়েছে।
দুদক চট্টগ্রাম–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনুসন্ধানের প্রয়োজনে বক্তব্য প্রদানের জন্য ২৮ কর্মকর্তাকে ডাকা হয়েছিল। এটা কিন্তু বাধ্যতামূলক না। যারা বক্তব্য প্রদান করবেন, তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আর যারা বক্তব্য প্রদান করবেন না, তাদের বক্তব্য ছাড়াই অনুসন্ধান পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
যে ২৮ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছিল তারা হলেন– সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মো, আবুল কালাম, মোহাম্মদ ইদ্রিস, ইঞ্জিনিয়ার মো. কপিল উদ্দিন ইউসুফ, কে বি এম শাহাজাহান, ডা. মো. আবুল কালাম, সিভারা হোসেন, মো. হাবিব উল্লাহ, এ এস এম সোহাইল, আ জ ম নাছির উদ্দিন, মোফাখারুল ইসলাম খসরু, মোহাম্মদ আলমগীর পারভেজ, আলাউদ্দীন আলম, মো. শাহ আলম বাবুল, মো. নুরুল ইসলাম মিন্টু, মো. রাশেদুল আমিন, মো. নুরুল ইসলাম শাহীন, মো. শফিকুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, মোহাম্মদ সাজ্জাদ, আবদুল মান্নান, সৈয়দ রফিকুল আনোয়ার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. আকবর হোসেন, ডা. তৈয়ব শিকদার ও এ এ এম সাইফুদ্দিন।
দুদক সূত্র জানায়, মূলত ‘দি চিটাগাং কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’ এর সাবেক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের পরিত্যক্ত সরকারি জমি আত্মসাৎ, জাল–জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারি, মিথ্যা তথ্য ও রেকর্ড সৃজন হিসাব খোলা, সমবায় অফিস ব্যাংকের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে নিজেরাই টাকা উত্তোলন করে নামে–বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
এছাড়া সোসাইটির খুলশী প্রকল্পের ৪নং সড়কের ১০৪/সি প্লটের পার্শ্ববর্তী ৭ দশমিক ১৮ কাঠা জায়গা বিধি–বহির্ভূতভাবে বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রেশন প্রদান, জাল পাওয়ার অফ এটর্নি দলিল সৃজন করে জনৈক মায়া রানীর ১৭ শতক জমি আত্মসাৎ, জাল–জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং মোহাম্মদ সাজ্জাদের ব্যক্তিগত মামলার খরচ বাবদ ব্যয়িত সাড়ে ৯ লাখ টাকা সোসাইটির তহবিল হতে প্রদানের অভিযোগের বিষয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এ অনুসন্ধানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদসহ আরো অসংখ্য কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, যে ২৮ কর্মকর্তাকে আমরা ডেকেছি, তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। অনুসন্ধান শেষে যে মামলাটি দায়ের করা হবে, সেখানে সবমিলে ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হবে।