দুদকের মামলায় খালাস পেলেন জুবাইদা-তারেক

এর মধ্য দিয়ে দণ্ডের সব মামলায় সাজামুক্ত হলেন তারেক রহমান

| বৃহস্পতিবার , ২৯ মে, ২০২৫ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

দুদকের দায়ের করা অবৈধ সম্পদের মামলায় জুবাইদা রহমানের সঙ্গে তার স্বামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল করে তাদের খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট। জুবাইদার করা আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি খসরুজ্জামানের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রায় দেয়। জজ আদালত এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। আদালত বলেছে, আইন অনুযায়ী জুবাইদা রহমানকে নোটিস না দিয়েই এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক, যা আইনসম্মত হয়নি। অভিযোগ দায়ের থেকে এ মামলার পুরো প্রক্রিয়াকে বিদ্বেষপূর্ণ বলেছে হাই কোর্ট। সে কারণে আপিল না করলেও তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল করে তাকেও খালাস দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে যেসব মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় এসেছিল, এর মধ্য দিয়ে তার সবগুলোতেই খালাস পেলেন তিনি। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

২০০৮ সালে কারামুক্তির পর তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং মেয়ে জায়মা রহমানও তার সঙ্গে ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সময়ে তাদের আর দেশে ফেরা হয়নি। গতবছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমান এবং তার মা খালেদা জিয়াকে কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই দেয় আদালত। গত বছরের ২ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জুবাইদার দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সাজা স্থগিতের আবেদনে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে দণ্ডাদেশ স্থগিতের ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৭ বছর পর গত ৬ মে শাশুড়ির সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন জুবাইদা। পরে তার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আপিলের আবেদন করেন।

মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায় পাঠের মধ্য দিয়ে গত ২২ মে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল শুনানিতে জুবাইদা রহমানের সঙ্গে তারেক রহমানের খালাস চেয়ে আর্জি জানান তাদের আইনজীবীরা। জুবাইদার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময়ে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে এ মামলা করেছিল দুদক। মামলায় ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জুবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। পরে একই বছর তারেক ও জুবাইদা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক রিট আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে ২ আগস্ট ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর ও জুবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তাদের জরিমানাও করা হয়। জুবাইদার ৩ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ১৪ মে তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। তার আগের দিন ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনার দরখাস্ত হাই কোর্ট মঞ্জুরের পর ওই আপিল করেছিলেন তারেকপত্নী।

দণ্ডের সব মামলা থেকে মুক্ত তারেক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ৮০টির অধিক মামলা হয়। পর্যায়ক্রমে সেসব মামলার বেড়াজাল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হচ্ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার মামলা, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা এবং মানহানির মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয়। দণ্ডের এসব মামলার মধ্যে দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে। একটি হচ্ছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং অপরটি হচ্ছে অর্থ পাচার মামলা। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পৃথক ধারার দণ্ড থেকে হাইকোর্ট খালাস দিলেও বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

এদিকে নড়াইলে মানহানির মামলায় দুই বছরের দণ্ড হলেও বাদী আবেদনের প্রেক্ষিতে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। আর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দুই ধারায় ছয় ও তিন বছরের দণ্ড বুধবার হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন। ফলে আইনজীবীরা বলছেন, এর মধ্যে দিয়ে দণ্ডের সব মামলায় সাজামুক্ত হলেন তারেক রহমান।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আজাদুল ইসলাম এবং বিএনপির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আজমল হোসেন খোকন তার সব মামলায় সাজামুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। এরপর তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আপিল বিভাগে আপিল করেন। শুনানি শেষে সেই আপিল মঞ্জুর আপিল বিভাগ। ফলে মামুনের সঙ্গে তারেক রহমানও খালাস পান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে খালেদা জিয়ার আপিলের সেটি মঞ্জুর করা হয়। তখন অন্যদের সঙ্গে তারেক রহমানও খালাস পান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলক্ষ লক্ষ তরুণের স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে গণতন্ত্র : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত