দুদকের চার্জশিটে কর পরিদর্শকও আসামি!

অবৈধ আয় পুলিশ দম্পতির

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

পুলিশ দম্পতির অবৈধ আয়ের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চার্জশিটে আসামি করা হলো চট্টগ্রামের কর পরিদর্শককেও। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, অবৈধ আয়ের অভিযোগ উঠা পুলিশ দম্পতির আয়কর নথি সরবরাহে অসহযোগিতা করার কারণে কর কর্মকর্তা দীপংকর ঘোষকে আসামি করেছেন। তবে কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ দাবি করেন, যে মামলা দুদক তদন্ত করেছে, ওই মামলার ঘটনার সময়ে তার চাকরিও হয়নি। তিনি নিজেও জানেন না, তাকে কেন আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রামের এসআই মো. নওয়াব আলী ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত থেকে তার নিজ নামে এবং স্ত্রী গোলজার বেগমের নামে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর মামলাটি করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলী আকবর। পরে মামলাটি তদন্তও করেন তিনি। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ৭ অক্টোবর পুলিশ দম্পতি বাদেও আরও দুই কর কর্মকর্তাকে মামলায় আসামি করা হয়। পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। পাশাপাশি পুলিশ দম্পতিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয় চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর সার্কেল-৯ এর অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. বাহাউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে তদন্ত কাজে অসহযোগিতার অভিযোগে সার্কেল-৯ এর কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে চার্জশিটে আসামি করা হয়।
আদালতে জমা দেয়া চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, এসআই নওয়াব আলী ও তার স্ত্রী গোলজার বেগমের নামে মোট এক কোটি ৫১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৩৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে পুলিশ দম্পতির মোট ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৭৬৮ টাকা মূল্যের আয়ের উৎস পাওয়া যায়। এতে পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে করা মামলায় এক কোটি ৩৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়। এসআই নওয়াব আলীর স্ত্রী গোলজার বেগম ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আয়কর নথি খুলেন। ওই নথিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে হতে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত ব্রোকারি কমিশন, মৎস্য চাষের অপ্রদর্শিত আয় হতে এক কোটি ১৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা প্রদর্শন করেছেন। মিরসরাই এলাকায় প্রায় সাড়ে ১৫ একর জলমহাল ইজারা নিয়ে মৎস্য চাষ করেছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন। কিন্তু জলমহাল ইজার নেয়া কিংবা মৎস্য চাষের বিষয়টি পুরোপুরি ভুয়া বলে দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়। কিন্তু ভুয়া মৎস্য খামার থেকে এক কোটি ১০লক্ষ টাকার আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. বাহাউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতা করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়।
চার্জশিটের একাংশে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, এজাহারনামীয় আসামিদের সাথে পরষ্পর যোগসাজশে সার্কেল-৯ এর কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ ভুয়া মৎস্য চাষের রেকর্ডপত্র হারানোর সাজানো নাটক তৈরি করে জিডি করার পরামর্শ দেন বলে তদন্তে জানতে পারেন। কিন্তু ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ডবলমুরিং থানায় দায়ের হওয়া ডায়েরি নং-৩৮ যখন করা হয় তখন ওই সার্কেলে কর্মরত ছিলেন না বলে দাবি করেন কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কথিত ডায়েরি হয়েছে ১ আগস্ট। কিন্তু আমি ওই সার্কেলে যোগদান করি ১৮ সেপ্টেম্বর। ওই জিডি করার ক্ষেত্রে আমার যে যোগসাজশের অভিযোগ করা হয়, সেটি মোটেও সঠিক নয়।’
অন্যদিকে চার্জশিটে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর রেকর্ডপত্র জব্দ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেলে গেলেও প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র জব্দ না করে ঢাকায় ফেরত যেতে বাধ্য হন বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে উপ কর কমিশনার মকবুল আহম্মদকে টেলিফোনে বার বার যোগাযোগ করে উক্ত আয়কর নথি বের করে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি গোলজার বেগমের আয়কর নথি জব্দ করা হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন।
তবে চার্জশিটে উল্লেখ করা এসব তথ্যের অসংগতি উল্লেখ করে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে সহযোগিতা চেয়ে কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যের (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) কাছে আবেদন করেন। কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ বলেন, ‘দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আলী আকবর ২৫ নভেম্বর রেকর্ড জব্দ না করে ঢাকায় ফেরার বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ ২৪ নভেম্বর তিনি গোলজার বেগমের আয়কর নথি জব্দ করেছেন। জব্দ নথিতে আমাকে স্বাক্ষী করা হয়। অথচ চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে আসামি করেছেন।’
এব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলী আকবর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর নথি জব্দের জন্য সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলে গেলে কর পরিদর্শক দীপংকর খুবই খারাপ আচরণ করেন। একজন তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে আমি খুবই অসহায় বোধ করি। যে কারণে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাকেও আসামি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, সেহেতু এখন বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয়। আদালত চাইলে অভিযোগ গঠনের সময় তাকে (দীপংকর ঘোষ) ডিসচার্জ করে দিতে পারেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ‘ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডস’ সম্মাননা পেলেন ভূমিমন্ত্রী