দুটি ওভারপাসের জন্য উচ্চতার আইন শিথিল

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা দুই প্রকল্প অবশেষে গতি পাচ্ছে ।। বাংলাদেশ-রেলওয়ে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা চট্টগ্রামের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ অবশেষে শুরু হচ্ছে। ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোড এবং আউটার রিং রোডের দুইটি ওভারপাশ নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রকল্প দুইটি ঝুলে ছিল। রেল লাইনের উপর দিয়ে যাওয়া ওভারপাশ দুইটির উচ্চতার ব্যাপারে রেলওয়ে আপত্তি করায় প্রকল্প দুইটি দীর্ঘদিন আটকা পড়েছিল। অবশেষে রেলওয়ের অনাপত্তি পাওয়া গেছে। এতে প্রকল্প দুইটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা হিসেবে বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করা হয়। উক্ত রাস্তাটি মুলত চট্টগ্রামের আউটার রিং রোডের অংশ। চট্টগ্রাম নগরীর বাইপাস রোড হিসেবেও সড়কটিকে বিবেচনা করা হয়।
এ সড়কে ভাটিয়ারী বিএমএ’র সন্নিকটে রেললাইনের উপর প্রায় ৮শ’ মিটার লম্বা একটি ওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে সিডিএ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এতে পুরো প্রকল্পের কাজ ঝুলে যায়। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড দিয়ে যান চলাচল অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ওভারপাসটি নির্মাণ না হওয়ায় প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না। পুরাতন একটি ব্রিজের উপর দিয়ে সিঙ্গেল রোডে গাড়ি চলাচল করছিল। পাশে মুখ থুবড়ে পড়েছিল নতুন ওভারব্রিজ নির্মাণ কার্যক্রম।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের সড়কের উপর দিয়ে যে কোন ধরনের ব্রিজ বা ওভারপাস নির্মাণ করতে রেলওয়ের অনুমোদন নিতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওভারপাস নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার আগে ব্রিজের উচ্চতার ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বায়েজিদ লিংক রোডের ওই ব্রিজটি প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতা দিয়ে নির্মাণ করছিল। কিন্তু প্রচলিত আইনে রেললাইন থেকে ২৬.৫৭ ফুট উচ্চতায় ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। সিডিএ কর্তৃপক্ষ ব্রিজের পিলারসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করায় নতুন করে ব্রিজ উঁচু করতে পারছিল না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও ছাড় দিচ্ছিল না। এতে পুরো প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকে।
অপরদিক পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশে রেললাইনের উপর প্রায় ৯শ’ মিটারের একটি ওভারপাস রয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই ব্রিজটিও রেললাইনের উপর থেকে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করছিল। এতেও আপত্তি জানায় রেলওয়ে। রেলওয়ের আপত্তির মুখে দুইটি ওভারপাস নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়।
অবশেষে বিষয়টি নিয়ে গত রোববার ঢাকার রেল ভবনে রেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারের সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে। বৈঠকে সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস, ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দাশসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। সিডিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়- রেলওয়ে উচ্চতার ব্যাপারে নতুন আইন করেছে ২০০০ সালে। অথচ প্রকল্প দুইটি বহু আগের। যখন প্রকল্প দুইটি গ্রহণ করা হয় তখনকার আইনে রেললাইনের উপর ২১.৩২ ফুট উচ্চতা রাখতে হতো। সেই হিসেবে রেলওয়ের আইনের তুলনায় বেশি উচ্চতার ওভারপাস নির্মাণ করছিল সিডিএ। রেলওয়ে আইন সংশোধন করে বর্তমানে যে উচ্চতা নির্ধারণ করেছে পুরাতন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এরপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবণ করে শুধুমাত্র উক্ত দুইটি ওভারপাসের উচ্চতার বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে এনওসি প্রদানে সম্মত হয়। এতে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রকল্প দুইটি নতুন করে গতি পাবে বলেও সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
গতকাল সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রেলওয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্প দুইটি অনেকদিন ধরে ঝুলেছিল। এখন আমরা দ্রুত কাজ শেষ করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদাকে বিদেশ নিতে আবার আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬