দুজনকে খুন করে চালক বেশে ২০ বছর আত্মগোপন

অবশেষে ধরা পড়লেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

প্রথম খুনের পর চলে আসেন নগরীতে, নিজেকে আড়াল করেন। ফের ফিরে যান লোহাগাড়ায়। এরপর ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ও ভিকটিমের ভাইকে হত্যা করেন। সেবার আর নগরীতে ফিরে আসেননি। চলে যান পাশের কালুরঘাট এলাকায়। বোয়ালখালীর এক মেয়েকে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। হয়ে যান ড্রাইভার। কখনো কালুরঘাট, কখনো আগ্রাবাদ, কখনো বন্দর এলাকায় এই পেশায় ছিলেন। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গাড়ির লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এড়িয়ে এভাবে কাটিয়ে দেন ২০ বছর।
তিনি হলেন, উচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও লোহাগাড়ার আমিরাবাদের মৃত বেলায়েত আলীর সন্তান মো. জসিম উদ্দিন (৫০)। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দীর্ঘ এ সময় আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বন্দরের নিমতলা বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ আদালতে সাক্ষী দিতে গেলে ব্যবসায়ী জানে আলমকে (৪৮) তার ১ বছরের শিশুর সামনে নির্মমভাবে লাঠিসোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র, হাতুড়ি ও গুলি করে হত্যা করা হয়; যা সেই সময় আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জানে আলমের বড় ছেলে মো. তজবিরুল আলম বাদী হয়ে গ্রেপ্তার জসিম উদ্দিনসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০০৭ সালের ২৪ জুলাই এ মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে ১২ জনকে ফাঁসি ও ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে জসিম উদ্দিনসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২ জনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের খালাস দেওয়া হয়।
র‌্যাব আরো জানায়, ব্যবসায়ী জানে আলমকে হত্যার চার মাস আগে ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর তার ছোট ভাইকে একইভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। সে মামলায়ও জসিম উদ্দিন প্রধান আসামি ছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি উক্ত দুই মামলার আসামি সৈয়দ আহম্মেদকেও (৬০) তারা গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি আকবরশাহ থানায় এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ী জানে আলম তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যা মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে। আর্থিকভাবেও কিছুটা সচ্ছল ছিলেন। তাই মামলা মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন। এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার ওপর বেড়ে যায়। প্রতিপক্ষের ধারণা ছিল, ব্যবসায়ী জানে আলমকে হত্যা করলে ওই পরিবারের মামলা-মোকদ্দমা চালাবার মতো কোনো লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোনো সাক্ষীও থাকবে না। আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তার সকল সম্পত্তি তারা সহজে গ্রাস করতে পারবে। এই কারণে ঘাতক চক্র প্রকাশ্য দিবালোকে জানে আলমকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার জসিম উদ্দিন এসব কথা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিপিওর আরো দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত, ২২ জন বদলি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ, মাঠে নামছে বিজিবি