নির্ধারিত সময়সীমা পেরুলেও বাড়েনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কমিটির আকার। দীর্ঘ ৭৭ দিন ধরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুইজনে সীমাবদ্ধ আছে সংগঠনটি। এতে ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলের। তারা দলের ‘আন্দোলন–সংগ্রামে’ ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে কমিটির আকার বৃদ্ধির দাবি জানান। এদিকে কবে নাগাদ আকার বৃদ্ধি করা হবে জানতে চাইলে নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা বলছেন ভিন্ন কথা। একজন জানান, আকার বৃদ্ধি করে কেন্দ্রে কমিটি জমা দেয়া হয়েছে। আরেকজন জানান, দুয়েকদিনের মধ্যে জমা দেয়া হবে। জানা গেছে, গত ৭ জুলাই সকালে এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের নগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তাদের পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটির আকার ৫১ সদস্যে উন্নীত করারও নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। ওই নির্দেশনার পর আড়াই মাস পেরুলেও কমিটির আকার বাড়েনি। কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রাহমান স্কাইপে বৈঠক করে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে কমিটির আকার বৃদ্ধির তাগাদা দেন। জানা গেছে, কমিটির আকার বৃদ্ধি না হলেও আহবায়ক–সদস্য সচিবের নেতৃত্বে কেন্দ্র ঘোষিত সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জাযগায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ৯ সদস্যের একটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটিও করা হয়। কমিটির আকার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, কমিটি মোটামুটি প্রস্তুত। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দুয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিব। নির্ধারিত সময়ে কমিটির আকার বৃদ্ধি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব দেয়ার পর পর শুরু হয় আন্দোলন। এরপর বন্যা। বন্যাকবলিতদের সাহায্য করার জন্য আমরা টিম গঠন করেছি। আন্দোলন ও বন্যার্তদের সাহায্য করাসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করেছি। ফলে ওই সময় কমিটির আকার বৃদ্ধির সুযোগ ছিল না।
কমিটিতে কাদের রাখা হবে জানতে চাইলে বলেন, যারা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিল, জেল–জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছি।
সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। সেখান থেকে ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে কারা প্রাধান্য পেয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে যারা ছিলেন সবাই যোগ্য। তবে ভবিষ্যত নেতৃত্বের কথা চিন্তা করে নবীন–প্রবীণের সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। কমিটির আকার বৃদ্ধির বিলম্বের কারণ হিসেবে এরশাদ উল্লাহর সুরে তিনি বলেন, ৭ জুলাই আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলেও ১৪ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয়। সরকার পতনের পরও কিছু ঝামেলা ছিল। পরবর্তীতে বন্যা হয়। সবসিমলিয়ে কিছুটা সময় লেগেছে। এখন ফাইনালি কমিটি জমা দিয়েছি। কয় সদস্যের কমিটি জমা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, সেটা তো আগেই ৫১ সদস্যের ফরম্যাট দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত নগর বিএনপির এক নেতা আজাদীকে জানান, বর্ধিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্তির জন্য একাধিক নেতা তাদের অনুসারি কর্মীদের নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত নামগুলো সমন্বয় করা এবং কাকে রেখে কাকে বাদ দিবেন বাছাই করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন আহ্বায়ক কমিটির দুই শীর্ষ নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নেতা বলেন, কমিটিতে স্থান পেতে অনেক চাপ ও অনুরোধ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। এর ভেতর যারা যোগ্য, যারা বিগত আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন তাদের নিয়ে কমিটির আকার বৃদ্ধি করা উচিত। দীর্ঘদিন দুই সদস্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দলের এবং দুই নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কমিটির আকার বৃদ্ধি করা উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিটির আগে নগরে ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ছিল বিএনপির। ২০২০ সালে ২৩ ডিসেম্বর গঠিত ওই কমিটিতে ডা. শাহাদাত হোসেন আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্কর সদস্য সচিব ছিলেন। গত ১৩ জুন এ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। যা ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির করা হয়। এটিই ছিল নগর বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে এর ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত নগর বিএনপির কমিটির আকার ছিল মাত্র পাঁচ সদস্যের। বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন ওই কমিটির সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হেসেন ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।