২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দুই মাস পর এসেছে জলাতঙ্কের টিকা। ইতোমধ্যে গতকাল থেকে রোগীদের দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যের এই টিকা। তবে দুই মাস টিকার সরবরাহ না থাকায় রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে টিকা কিনতে হয়েছে। এতে পোষা কুকুর, বিড়াল, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রাণীর কামড় ও আঁচড়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে টিকা নিতে আসা হতদরিদ্র রোগীরা বিপাকে পড়েন। হাসপাতালে টিকার সংকটের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তখন বিভিন্ন ওষুধ দোকানদাররা বেশি দাম রাখে এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। তবে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা আসায় রোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জলাতঙ্ক টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে টিকার সংকট ছিল। এদিকে চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে বিনামূল্যের জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা অবশ্য জানান–বিআইটিআইডি হাসপাতালটি শহর এলাকার বাইরে হওয়ায় সেখানে জলাতঙ্কের টিকা নিতে যাওয়া রোগীদের চাপ কম। তাই সেখানে টিকার সংকটও ছিল না। বিআইটিআইডিতে চাপ না থাকলেও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো প্রাণী কামড়ালে মোট তিনটি টিকা নিতে হয়। কামড়ানোর প্রথম দিন একটি, তৃতীয় দিন দ্বিতীয়টি এবং কামড়ানোর সপ্তম দিনে তৃতীয়টি। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ক্যাটাগরি–৩ এবং তীব্র ক্যাটাগরি–২ এর অনেক রোগীকে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধক ইমিউনোগ্লোবুলিন নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে দীর্ঘ সময় টিকার সংকটের কারণে রোগীদের বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে প্রতিটি টিকা কিনতে হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এছাড়া ইমিউনোগ্লোবুলিন কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকায়।
গতকাল দুপুরে জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা রাউজান উপজেলার বাসিন্দা আবুল হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, সকালে বাড়ির আঙিনায় কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছি। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে জেনারেল হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে টিকা নাই, সেই হিসেব করে টিকা কেনার টাকাও নিয়ে এসেছি। তবে এখানে জানতে পারলাম, টিকা এসেছে। তাই বিনামূল্যে টিকা দিতে পেরেছি।
২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ একরাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকার সরবরাহ ছিল না। তবে আশার কথা হচ্ছে– আমাদের কাছে টিকা এসে পৌঁছেছে। আজ (গতকাল) থেকে রোগীদের আমরা টিকা দিতে পারছি। আমাদের কাছে বর্তমানে টিকা পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মডার্ন টিকার পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে তিনটি ডোজ নিয়ে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে পূর্ণ ডোজ টিকা দিতে হবে। যেহেতু এই রোগে মৃত্যু নিশ্চিত তাই এক ডোজ টিকা দেয়াটাও বিপদ বয়ে আনতে পারে। দুই ধরণের র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রয়েছে। একটি হচ্ছে ফিউরিয়াস র্যাবিস, আরেকটি হচ্ছে প্যারালাইটিক র্যাবিস। এরমধ্যে ফিউরিয়াস র্যাবিস খুব ভয়ঙ্কর। এটির ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া প্যারালাইটিক র্যাবিস অতটা ভয়ঙ্কর নয়। এতে লক্ষণ সবগুলো প্রকাশ পায় না। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হলে– কুকুর বিড়াল কিংবা অন্যকোনো প্রাণী কামড় ও আচড়ের পরে যদি সেই জায়গায় যদি চুলকায় তবে ধরে নিতে হবে এটি জলাতঙ্ক রোগ। জলাতঙ্ক রোগীরা পানি দেখলে ভয় পান।
আলো কিংবা বাতাসের সংস্পর্শে এলে এ ভীতি আরও বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা নিঃসৃত হয়। অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং মানুষ দেখলে কামড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে কার্ডিয়াক হয়ে অ্যারেস্ট হয়ে মারা যায়। এটি এমন এর রোগ যার মৃত্যু অবধারিত।