দুই মাস কষ্ট করুন, কাতালগঞ্জে জলাবদ্ধতা থেকে আজীবনের জন্য মুক্তি পাব : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

খালের জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় হিজড়া খাল দখল হয়ে বড় বড় বিল্ডিং উঠে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, হিজড়া খালের প্রকৃত প্রস্থ ৩০ ফুট। এখন ১৮ ফুট আছে। আরো ১২ ফুট বিস্তৃত করে ৩০ ফুট করতে হবে। এজন্য আরএস, বিএস শিট মিলিয়ে বিল্ডিং ভাঙবে। কাজেই এখানে যারা বিল্ডিং মালিক আছেন তাদেরকেও বৃহত্তর স্বার্থে সেক্রিফাইস করতে হবে।

গতকাল শনিবার দুপুরের নগরের কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডের মুখে হিজড়া খালের পাড়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি হিজড়া খাল সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পাঁচলাইশকাতালগঞ্জ এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে হিজড়া খালের সংস্কার কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজ চলাকালীন কিছু জনদুর্ভোগ হয়। হয়তো সাময়িক এ জনদুর্ভোগ আমাদের স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে। কাজ করার জন্য কিছু বাঁধ দিতে হয়। না হলে কাজ করতে অসুবিধা হয়। সাময়িক যে পানি উঠছে, এটার জন্য চিন্তা করবেন না। ২৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী সমাধান পাবেন। আমরা সাময়িক কিছু করতে চাই না। তাই কাজ ধরেছি। হিজড়া খালের সংস্কারের লক্ষ্যে খালের দুই পাশের ভবন ভাঙার বিষয়টি স্পষ্ট করে ভবন মালিকদের উদ্দেশে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এখানে ডকুমেন্টের বাইরে গিয়ে কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা কিছু করবে না। ডকুমেন্টের বাইরে কিছু হবে না। আরএসবিএসের বাইরে কেউ কিছু (জমি) নিতে চাইলেও দেবেন না। খালের জমি যা আছে তা দিতে হবে। আপনাদেরও এখানে হাঁটতে হবে। কারো উপর কোনো অনিয়ম হবে না। যতটুকু ভাঙার দরকার ততটুকু ভাঙা হবে।

তিনি বলেন, পাঁচলাইশে আমার আত্মীয়স্বজনের জায়গা ভেঙে দেয়া হয়েছে। তারা আমার বাসায় গেছে। আমি বলেছি, যতটুকু দরকার আছে তারা ততটুকু ভাঙবে। খালের জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না। মেয়র বলেন, এই এলাকায় (কাতালগঞ্জ) সবচেয়ে বেশি পানির সমস্যা হয়। সারা চট্টগ্রাম শহরে যখন পানি কমে যায় তখন এই রোডে জলাবদ্ধতা থেকে যায়। আমি নিজেও এসেছি। আমি নিজে পানিতে নেমে নালা পরিষ্কার করেছি, জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করেছি। পরিষ্কার করার পরও যখন পানি উঠেছে তখনই বুঝেছি টেম্পোরারি সমাধান নয়, পারমানেন্ট সলিউশন দরকার।

তিনি বলেন, স্থায়ী সমাধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ৩৬টি খাল খননের প্রকল্পের অংশ হিসেবে হিজড়া খালটি খনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার করছে। হিজড়া খালটি গোলপাহাড়, মেহেদীবাগ এলাকা থেকে শুরু হয়ে কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, দামপাড়া, পশ্চিম ও পূর্ব বাকলিয়া, চকবাজার, কাপাসগোলা হয়ে ফুলতলীতে চাক্তাই খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই পুরো জোনে অসংখ্য আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, ক্লাব ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। খালটি দীর্ঘদিন ধরে দখল ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুম ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে এখানে পানি জমে থাকত।

শাহাদাত বলেন, গত এক বছর ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সমন্বিত কর্মযজ্ঞ চলছে, তারই অংশ হিসেবে হিজড়া খালের এই সংস্কার কাজ চলছে। খালটি খনন করতে গিয়ে কিছু জায়গায় বাঁধ দিতে হচ্ছে; যার কারণে কাতালগঞ্জসহ কিছু এলাকায় হঠাৎ পানি উঠে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চট্টগ্রামবাসী এবং এই এলাকার যারা আছি আমাদের হয়তো ফেব্রুয়ারিমার্চ দুই মাস কষ্ট হবে। এই দুই মাস কষ্ট করতে পারলে জলাবদ্ধতা থেকে আজীবনের জন্য মুক্তি পাব।

জামালখান খালের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, হিজড়া খাল ও জামালখান খাল এই দুটি খাল চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামালখান খাল সংস্কার কাজও একযোগে চলছে এবং তা জানুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

বাঁধের কারণে জমে থাকা পানি অপসারণে ইমার্জেন্সি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। এখানে ৪৫ ঘণ্টা পানি থাকে। আমাদের পাম্পিং মেশিন আছে। পাম্পিং করব। এখানে যে পানি উঠে সাংবাদিকরা সেটা নেগেটিভলি না দেখে পজেভটিভলি দেখেন। মিডিয়াকে অনুরোধ, কাজ শেষ হলে আর পানি থাকবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহর থানা থেকে লুট হওয়া পিস্তল লক্ষ্মীপুরে উদ্ধার