দুই মন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা

হাছান মাহমুদ ও নওফেল

শুকলাল দাশ | শনিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের দুই সংসদ সদস্য। চট্টগ্রাম৭ আসনের ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম৯ আসনের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষামন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীদের সাথে চট্টগ্রামের এই দুই মন্ত্রীও শপথ নিয়েছেন। নগরীর ও জেলায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ে দুজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পেয়ে উচ্ছ্বসিত চট্টগ্রামের মানুষ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এ দুই মন্ত্রীর হাত ধরে উন্নয়নে এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম।

গত বুধবার সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার প্রজ্ঞাপনে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নাম দেখতে পেয়ে চট্টগ্রামবাসী অনেক খুশি হয়েছিলেন। প্রায় ৯২ লাখ জনসংখ্যার পুরো চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন কাজের সমন্বয় না থাকায় জনগণ অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্টজনদের। বিশেষ করে নগরীতে সরকারি স্কুল (বালকএবং বালিকা) এবং কলেজের অপ্রতুলতা রয়েছে। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী পাওয়ায় চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। একইভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছেও চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা অনেক। কারণ চট্টগ্রামের প্রায় উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। তাদের সুখদুঃখ এবং বিপদেআপদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে।

নতুন দুই মন্ত্রীর প্রতি চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি বলে মন্তব্য করে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান আজাদীকে বলেন, এবার আমরা চট্টগ্রামবাসী দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পেয়েছি। এই দুই মন্ত্রী অত্যন্ত মেধা এবং দক্ষতার সাথে বিগত দিনগুলোতে সরকারের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারও যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানে থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল; উনি আগে এই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন। শিক্ষাকে আধুনিকপ্রযুক্তি নির্ভর এবং বাস্তবমুখী করা জন্য উনার প্রচেষ্টায় রয়েছে। এখন পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেনকাজ করার সুযোগ অনেক বেড়েছে।

এই চট্টগ্রামে সরকারি স্কুলকলেজের সংকট রয়েছে। সরকারি স্কুলকলেজ বাড়াতে হবে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে চট্টগ্রামে আরো অন্তত ৫টি সরকারি গার্লস এবং বয়েজ স্কুল দরকার এবং ৩টি সরকারি কলেজ দরকার। আধুনিক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কারিগরি শিক্ষা এবং আইটি বেইস শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। আমি মনে করি এসব পরিকল্পনা বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রীর আছে। তিনি শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।

চট্টগ্রামে নিযুক্ত রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ, তিনি আগের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা চট্টগ্রামের এই দুই মন্ত্রী চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নে সমন্বয় সাধন করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

বিশেষ করে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সকল চলমান মেগা প্রকল্পগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা। চট্টগ্রামে আধুনিক কোনো গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই, চট্টগ্রাম এখন আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে, ব্যবসাবাণিজ্য এবং পর্যটনের জন্য বিদেশীরা আসছেন। চট্টগ্রামের সাথে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবসাবাণিজ্যের কারণে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই কারণে বিদেশীরা আসছেন। অনেকগুলো চলমান মেগা প্রকল্পে শত শত বিদেশী এখানে কাজ করছেন। এখন যদি চট্টগ্রামে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না উঠে তাহলে চট্টগ্রাম পিছিয়ে পড়বে। তাছাড়া এই শহরে কোনো পার্ক নেই, একটি আধুনিক নগরীতে নাগরিকদের প্রশান্তি এবং বিনোদনের জন্য পার্ক না থাকাটা খুবই দুঃখজনক একটি ব্যাপার। এখানে নতুন পার্ক গড়ে তোলা দরকার।

সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর প্রতি চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশিষ্ট স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সোহেল মোহাম্মদ শাকুর।

এই ব্যাপারে তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্তমান সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পেয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। এই চট্টগ্রামের জন্য কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমার বিশ্বাস উনারা করবেন। কারণ আগেও তারা যে মন্ত্রণালয়ে ছিলেন, সেখানে থেকে চট্টগ্রামের জন্য কাজ করেছেন। এখন চট্টগ্রামের জন্য কাজ করার সুযোগ আরো বেড়েছে। চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রত্যাশা এই শহর পরিবেশ বান্ধবআধুনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠুক। এখানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে পুরো নগরীকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে।

সৌন্দর্যবর্ধনকে বাণিজ্যকীকরণ করতে হবে কেন? সেটা আমাদের বুঝে আসে না? একটি নগরীকে পরিবেশ বান্ধব করতে হলে সৌন্দর্যবর্ধনের দরকার আছে। সেটার সাথে তো বাণিজ্যের সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমাদের আবাসিক এলাকাগুলোবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কারণে আবাসিকের চরিত্র হারিয়েছে। এবার আমরা দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পেলাম, তাদের কাছে আমাদের চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা অনেক। দুইজন মন্ত্রীই অত্যন্ত মেধাবীদক্ষ এবং পরিচ্ছন্ন। দুইজনেই আগের মন্ত্রণালয়ে দক্ষতার সাথে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন। আমাদের এই নগরীতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা আছে। বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আগে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। আমি তাকে জানি, শিক্ষা নিয়ে উনি ভালো চিন্তা ভাবনা করেন। শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তন, যেমনবর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞান ভিত্তিক কর্মমুখি শিক্ষার দিকে জোর দিতে হবে। সেটা বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রীর চিন্তাচেতনায় আছে। তিনি চট্টগ্রামের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী উনার ওপর আস্থা রেখেছেন।

বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন ও চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, আমরা এবার শিক্ষা মন্ত্রী পেলাম। উনি আগে একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের প্রত্যাশা তিনি আধুনিক শিক্ষানীতির সাথে প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন আনবেন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষকরা যাতে নিয়োগ পান সেই পদ্ধতি তিনি চালু করবেন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা যাতে থাকেন, সেটা নিশ্চিত করবেন। আমাদের বৃহত্তর চট্টগ্রামে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় দরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রীও আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশের প্রবাসী যারা আছেন তার সিংহভাগই চট্টগ্রামের। চট্টগ্রামের প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখেন। আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েন। তাদের দুঃখকষ্টগুলো যদি লাঘব করা যায়তাহলে চট্টগ্রামের প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে আরো ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন এবং সংস্কৃতি অনেক পিছিয়ে পড়েছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য সেটাকে সংরক্ষণের জন্য দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া চট্টগ্রামের উন্নয়নে সকল সেবা সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বয় জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ৮ ফেব্রুয়ারি
পরবর্তী নিবন্ধচুনতি অভয়ারণ্যে ঝুলছে তালা হারিয়েছে জৌলুস