১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া রাউজানের ফাঁড়িরকুল ব্রিজটির পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২২ সালে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৭ টাকা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ পেয়েছিল যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘এ আলী–দিদার অ্যান্ড মাজেদা জেবি এন্টারপ্রাইজ’। ২০২২ সালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়া হয় ব্রিজটি এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্তে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে ২৫ সালে এসেও ব্রিজের কাজ শেষ করতে পারেনি। এখন ব্রিজটির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার চার ইউনিয়ন পাহাড়তলী, পূর্বগুজরা, বাগোয়ান, কদলপুরের বিভিন্নমুখি যাতায়াতকারী মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ব্রিজ পার হয়ে চারটি ইউনিয়নের আট দশটি বড় বড় গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। ব্রিজটি দীর্ঘসময় ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে প্রতিদিন শত শত গ্রামবাসী এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূর দিয়ে হেঁটে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয় জনসাধারণ সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর সংযোগ হয়ে আসা হ্রদের খালের উপর রাউলির পোল খ্যাত ফাঁড়িরকুল ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ধাতব নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে। ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বস্ত ব্রিজটি বিগত প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে একইভাবে পড়েছিল। এলাকার মানুষ কোনোভাবে এর মধ্য দিয়ে যাতায়ত করতো। ২১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এই ব্রিজ পুণঃনির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করেছিল। ওই দরপত্রে অংশ নেয় যৌথ অংশিদারিত্বে থাকা আলোচিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আগের বিধ্বস্ত ব্রিজটি অপসারণ করলেও যথাসময়ে কাজ শুরু করেনি। তারা অনেক বিলম্বে নির্মাণ কাজে হাত দিলেও নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে কাজ শেষ করার সময়সীমা পার করেছে। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনও লাপাত্তা হয়ে যায়। ঠিকাদারের লোকজন ব্রিজ এলাকায় আসা যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এখন ব্রিজটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, আদিকাল থেকে এই ব্রিজটির উপর দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের চলাচল ছিল। বিশেষ করে পাহাড়তলী ইউনিয়নের খৈইয়াখালী বৌদ্ধ গ্রামের একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের সাধকগণের যাতায়াত ছিল বেশি। এ কারণে ব্রিজটির পরিচিতি পেয়েছিল রাউলির পোল হিসাবে। ভোগান্তির শিকার ওই এলাকার মানুষ বলেছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত এই এলাকার লাখো মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আগামী বর্ষার আগে ব্রিজটির বাকি কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নেয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বের গোড়ার সাথে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জনস্বার্থে সেখানে সীমানা প্রাচীর সরানো নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল সেটি দূর করার চেষ্টা চলছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুততার সাথে কাজ শেষ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।