বাঁশখালীর বাহারছড়ায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল বশর তালুকদার (৪৮)। তিনি বাহারছড়া ইউনিয়নের চাপাছড়ি গ্রামের মৃত আবদুল ছালাম তালুকদারের পুত্র ও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। গত শুক্রবার রাতে খুন হন তিনি। ঘটনার সময় তার দুই পা কেটে নেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাতে চাপাছড়ি দরগা পুকুরপাড় এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আবুল বশর। বাড়ির একটু কাছেই আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আবুল বশরের পথ আগলে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা আবুল বশরকে কুপিয়ে তার দুই পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কালীপুর ইউনিয়নের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার। এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবিরসহ পুলিশের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যায় ৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিনসহ সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে তারা।
এর আগে গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আবুল বশরের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকালে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। আবুল বশরের ৩ ছেলে ও ৪ কন্যা। তাদের মধ্যে বড় ছেলে ওমানপ্রবাসী আর মেজ ছেলে চট্টগ্রাম শহরে চাকুরি করেন। মেয়েগুলো এখনো ছোট।
গতকাল আবুল বশরের পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তার স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, কেন তারা আমার স্বামীকে এভাবে হত্যা করল? কি অন্যায় করেছেন তিনি? এখন আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব, কে নেবে আমার পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব?
স্থানীয়রা জানান, আবুল বশর তালুকদার এলাকার বিভিন্ন ঘটনায় সালিশী বিচার করতেন। প্রতিবাদ করতেন অন্যায়ের। এসব কারণে কিছু মানুষ তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা আবুল বশর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া জরুরি।
আবুল বশর হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন বিএনপি নেতা ও গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লেয়াকত আলীও। তিনি অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে বাঁশখালী উপজেলার পরিবেশ। গত পাঁচদিনে উপজেলার চাম্বল, পুকুরিয়া ও বাহারছড়ায় এ নিয়ে তিনটি পৃথক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটল। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন চাম্বল বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৩৫)। রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন তিনি। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই ১৮ মার্চ রাতে হামলার শিকার হন ছাবের আহমেদ (৪৫)। তিনি পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, ছাবের আহমেদের পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলে তার চাচাতো ভাই। গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ময়নাতদন্ত শেষে আজ রোববার বিকেলে নিজ বাড়িতে ছাবের আহমেদের জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে চাম্বলে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৩৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আর পুকুরিয়ার ছাবের আহমেদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেছেন তার স্ত্রী আমেনা খাতুন। তিনি ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ মো. হাসান (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, আবুল বশর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ঘটনায় বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। অধিকাংশ ঘটনা পারিবারিক ও জায়গা-সম্পত্তির বিরোধ থেকে সৃষ্ট বলেও উল্লেখ করেন ওসি।