দুই নবজাতককে দত্তক গ্রহণকারীদের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ জুন, ২০২৪ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

স্বামী, স্ত্রী মিলে টাকার বিনিময়ে দত্তক দেন তাদের জমজ নবজাতককে। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্ত্রী মানব পাচারের মামলা করেন স্বামীর বিরুদ্ধে। সেই মামলা তদন্তের পর দুই জমজ শিশুকে উদ্ধার করে আদালতে উপস্থাপন করলে বিচারক দুই নবজাতককে দত্তক গ্রহণকারীদের জিম্মায় দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত দুই শিশু দত্তক গ্রহণকারীদের জিম্মায় থাকবেন। গতকাল চট্টগ্রামের মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্তাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। এর আগে গত শনিবার পৃথক অভিযানে রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ও বায়েজিদের অঙিজেন এলাকা থেকে পাঁচ মাস আগে বিক্রি হওয়া ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শিশু রায়ানকে তিন লাখ টাকায় এবং ফাহমিদাকে এক লাখ টাকায় দত্তক দেওয়া হয়েছিল। আদালত সূত্র জানায়, নবজাতক বিক্রির ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মারধর করে স্ত্রী মুন্নী আকতারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন স্বামী মো. হাবিবুর রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুন্নী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, প্রসবের পর তার দুই নবজাতককে স্বামী হাবিবুর রহমান অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তাদের মেয়ে রুমা আকতার ও ছেলে রেহান প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ডাক্তার রোকসানা আকতার ও মামুনকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান বাচ্চা দুটি অসুস্থ। তাই তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাবিবুর রহমান মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। পিবিআই জানায়, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজসহ বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক পর্যায়ে তিনি সন্তানসম্ভবা হন। অন্যদিকে শিরু আকতার নামে এক নারীর কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি নবজাতক পুত্র সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন এবং রুনা আকতারের কোনো মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন। ঘটনাক্রমে উভয়ের সাথে রাশেদা বেগম নামে আরেক নারীর পরিচয় হয়। রাশেদা তাদেরকে আশ্বস্ত করেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে তিনি তাদেরকে পছন্দমতো নবজাতক ছেলেমেয়ে এনে দিতে পারবেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাশেদা সন্তানসম্ভবা তথা মামলার বাদী মুন্নী আকতারের সাথে শিরু আকতার ও রুনা আকতারের পরিচয় করিয়ে দেন। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার রাশেদা বেগমকে তিন লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এছাড়া বাদীর প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ প্রদানে তারা রাজি হন। রাশেদা বিষয়টি নিয়ে মুন্নী আকতারের সাথে আলোচনা করলে তিনি টাকার বিনিময়ে তার গর্ভে থাকা ২ সন্তান প্রসবের পরপরই দত্তক দিতে রাজি হন। পিবিআই জানায়, মুন্নী আকতার তার স্বামী হাবিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করেন। তিনিও অর্থের বিনিময়ে দত্তক দিতে সম্মতি দান করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের এসআই মো. শাহেদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, দুই নবজাতককে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক দত্তক গ্রহণ কারী দুই নারীর জিম্মায় দিয়েছেন। প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত দুই শিশু তাদের জিম্মায় থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা শিবিরে তিন যুবককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধহেঁটে খাল পার হওয়ার চেষ্টা, স্রোতে ভেসে গেল নানী-নাতি