দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি সৃষ্টির সম্ভাবনা

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর উদ্বোধন

| শুক্রবার , ১২ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ এর উদ্বোধন করেছেন। খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর দিয়ে দুই দেশকে যুক্ত করা প্রথম সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন এক অধ্যায়ের শুভ সূচনা হলো। সেতুটির ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি সৃষ্টি হবে। এই সেতুকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সহযোগিতার স্মারক হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দুই দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সেতুকে দুই দেশের মধ্যে নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য, মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো। আর এই মৈত্রী সেতুর কারণে ত্রিপুরা হয়ে উঠল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নর্থ-ইস্টে পৌঁছানোর গেটওয়ে।
১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে। এই প্রথম কোনো নদী সেতু দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত যুক্ত হলো। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণ হবে। সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন দুই প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়বে। ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাত রাজ্যের সঙ্গে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারিত হবে। একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যোগাযোগের আরেকটি বিকল্প পথ তৈরি হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপও কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা রামগড় সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে রামগড়-সাবরুম নতুন স্থলবন্দর তৈরির সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করে বলেন, এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমরা শুল্ক পাবো। এছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যের উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্সের সাথে আমাদের কানেক্টিভিটি বাড়বে। তাঁরা বলেন, এখন যেহেতু সেতু হয়ে গেছে, সুতরাং আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ করা যাবে। অন্যদিকে মীরসরাই ইকোনমিক জোনে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, এই সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের একটি সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড এনএইচআইডিসিএল। সেতুর একপ্রান্তে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম শহর, অন্যপ্রান্তে বাংলাদেশের রামগড়-আর চট্টগ্রাম বন্দরে সহজ অ্যাকসেসের মাধ্যমে এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্রটাই আমূল বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা, আর এই সুদীর্ঘ সীমান্তের অনেক জায়গাতেই ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, ইছামতী বা ফেনীর মতো বহু নদীই দু’দেশকে আলাদা করেছে। আন্তর্জাতিক সীমারেখা এই নদীগুলোর বুক চিরে গেলেও সীমান্তে দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে, এমন কোনো সেতু কিন্তু এতদিন ছিলো না।
সাবরুম আর রামগড়ের মাঝে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ‘মৈত্রী সেতু’ সেই অভাবই শুধু মেটাবে না, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের একেবারে হাতের নাগালে এনে দেবে।
প্রায় ১৩৩ কোটি রুপি খরচ করে এই ব্রিজটি বানানো হয়েছে। সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। সাবরুমে এই চেকপোস্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মালামাল ও মানুষজনের চলাচলও অনেক সহজ হবে বলে বলা হচ্ছে। ফেনী নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদী। সেতুটি বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে আরো সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশেষজ্ঞ চক্ষু সেবা প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছে দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমরিশাস-এর জাতীয় দিবস