দুই দলকেই ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি

দৃষ্টি আজ ঢাকায় ।। নয়া পল্টনে বিএনপি, বায়তুল মোকাররমে আওয়ামী লীগ

| শুক্রবার , ২৮ জুলাই, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন, নাকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনআওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই বিপরীতমুখী অবস্থান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার রাজপথ। আজ শুক্রবার দুই দলই প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে সমাবেশ করছে। সরকারবিরোধী এবং সরকারি দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে তাই তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সেজন্য পুলিশ দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত বেঁধে দিয়ে অনুমতি দিয়েছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি শুক্রবার বেলা ২টা থেকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, দুই পক্ষকেই তারা অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আশুরার নিরাপত্তায় পুলিশের ব্যস্ততা রয়েছে, প্রতিদিন তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। তারপরও বিএনপি ও যুবলীগকে তাদের পছন্দের জায়গায় ২৩টি শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দুই দলকেই তাদের চৌহদ্দী নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতালের মোড় (ফকিরাপুল) পর্যন্ত এলাকার মধ্যে তাদের মিছিলসমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে মুক্তাঙ্গনের মধ্যে তাদের সমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বড় দুই দলকে একই দিনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে, নাকি সহানুভূতিশীল হয়েই তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে বড় কোনো থ্রেট নেই। যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ তাই যে কোনো কুচক্রী মহল বা যে কেউ এই সমাবেশের সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। এজন্য আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ রাখব, আনসার থাকবে, আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) থাকবে, র‌্যাব থাকবে, আমাদের বিজিবি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবো।

বিএনপির মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সেজন্য নয়া পল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল দলটি। এর পাল্টায় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটেই শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্যদিবস হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো দলকেই অনুমতি দিচ্ছিল না। বিএনপিকে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল পুলিশের তরফ থেকে।

এ পরিস্থিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি এক দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার নয়, তারা মহাসমাবেশ করবেন শুক্রবার বেলা ২টায়। আর সেটা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে। তখন যুবলীগও জানায়, তাদের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টায় নেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে সেই কর্মসূচি হবে।

তবে বৃহস্পতিবার আবারও সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে যুবলীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জানান, শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করার জন্য আবারও অনুমতি চেয়েছেন তারা। বিকাল ৩টায় সেখানে সমাবেশ হবে।

কর্মদিবসে সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুই দলকেই ধন্যবাদ জানান পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, দুই দলের ক্ষেত্রেই আমাদের তরফ থেকে নির্দেশ ও অনুরোধ থাকবে তারা কোনো লাঠিসোঁটা কোনভাবেই সমাবেশে আনতে পারবেন না। কোন ব্যাগ বহন করতে পারবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বক্তব্য কেউ দিতে পারেবন না। নির্ধারিত চৌহদ্দীর বাইরে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন না।

জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রত্যেক দলই নিজস্ব ভলান্টিয়ার রাখবেন। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রত্যেক দলই তাদের স্বেচ্ছাসেবক বা শৃঙ্খলার জন্য লোক রাখবে, যারা পুলিশকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। কোনো দলই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার মত কোনো কাজ করবেন না। যদি আমরা কোনো দলের পক্ষ থেকে এরকম দেখি, তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মহাসমুদ্রের স্বপ্ন বিএনপির : এদিকে পুলিশের অনুমতি পওয়ার পর ঢাকার নয়া পল্টনে মহাসমাবেশের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি। আয়োজনের খুঁটিনাটি সামাল দিতে বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মীরা সকাল থেকেই ভিড় করে আছেন কার্যালয়ের সামনে। বিপুল সংখ্যক পুলিশও আছে সেখানে।

বিএনপির মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, শুক্রবার নয়া পল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আমাদের এই সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। আর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেছেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জনগণ এই সরকারকে সিগন্যাল দেবে, ক্ষমতা ছাড়ো। এনাফ ইজ এনাফ। জনগণ এই সরকারকে আর চায় না।

মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই মহাসমাবেশে অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। শুক্রবার বেলা ২টায় শুরু হবে সমাবেশের কাযর্ক্রম। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলোও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ করবে।

লাখো মানুষের ঢল নামানোর প্রস্তুতি আ. লীগের : মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলেএমন আশঙ্কা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সেই শঙ্কা থেকেই যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রতিহত করতে দলটির সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলো সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখছে। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীতে লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থক সমবেত করা হবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৫ জুলাই এক সভায় বলেন, খবর পাচ্ছি, সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র কিনছে তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাদের অস্ত্র সরবরাহের একটি ঘাঁটি। আগ্নেয়াস্ত্র এনে তারা মজুত করছে। তারা মনে করে অস্ত্র শক্তি হলো আসল শক্তি। যারা অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকার কথা নয়। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, চোখকান খোলা রাখুন। সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত। বিএনপি সংঘাত চায়। মাঠে সতর্ক থাকব, সংঘাত যারা করতে আসবে তাদের প্রতিহত করব। তারা খালি মাঠ পেলে সংঘাত করবে। সেই প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যাপক জমায়েত নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। দলের থানা, ওয়ার্ডসহ প্রতিটি এলাকার নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্র লীগের এই যৌথ শান্তি সমাবেশ ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ে করার কথা আগে বলা হলেও এখন জানা গেছে, সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযা আছে ২৩ শর্তে
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে এক যুগ আগে স্ত্রী খুনের মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন