মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ ছাত্র-শিক্ষকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দিয়েছে সারাদেশের মানুষকে। রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটু অপেক্ষা, একটু সতর্কতার মানসিকতা থাকলে এবং একই সাথে গেটম্যানরা যদি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হন তাহলে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খৈয়াছড়া ক্রসিংয়ে মাইক্রোবাসের চালক যদি দুই থেকে তিন সেকেন্ড অপেক্ষা করতেন তাহলে আজকের এই শোকের মাতম দেখতে হতো না বলে আক্ষেপ করছেন প্রত্যক্ষদর্শী কলেজ শিক্ষক শেখ ফরিদুল আলম। একই কথা বলেছেন স্থানীয় দোকানদার ভোলা মিস্ত্রি, মো. রফিক এবং কয়েকজন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক)।
রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয় তার ৮৯ শতাংশই ঘটে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে। সব রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও উপযুক্ত গেটবারের ব্যবস্থা করা ও রেলক্রসিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করার দাবিও সংশ্লিষ্টরা বারবার করে আসছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে ট্রেন আসার আগে গেটম্যান ক্রসিং এলাকায় ব্যারিয়ার ফেলে দিলেও সিএনজি টেঙি, রিকশা, কার ও মাইক্রো ড্রাইভার নিজেরা ব্যারিয়ার তুলে ঝুঁকি নিয়ে ক্রসিং পার হয়ে যান। বাধা দিলে গেটম্যানের সঙ্গে বিতণ্ডায়ও জড়ান অনেক চালক।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে জানান, প্রত্যেক লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকে। গেটম্যান ট্রেন আসার আগে গেট বন্ধ করলেও সিএনজি-রিকশা প্রাইভেট ও মাইক্রোবাস চালকরা গেট তুলে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ক্রসিং পার হওয়ার সময় সবাইকে খুবই সতকর্তার সঙ্গে পার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রেলওয়ের এই অভিজ্ঞ প্রকৌশলী।
একই কথা জানালেন মহানগর প্রভাতী ট্রেনের (যে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জন নিহত হয়েছেন) লোকোমাস্টার জহিরুল হক খানও। তিনি জানান, মাইক্রোবাসটি এতো স্পিডে ঢুকে গেছে। কোনো ক্রসিং পার হওয়ার সময় গাড়ি চালককে উভয় পাশ দেখে আস্তে আস্তে যেতে হয়। গেটম্যান ব্যারিয়ার না ফেললেও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলকারী রেল লাইনের ক্রসিংগুলো পার হওয়ার সময় খুবই সতর্কতার সঙ্গে পার হতে হয়। কিন্তু বড়তাকিয়া স্টেশনের এই ক্রসিংটি পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাস চালক মুহূর্তের মধ্যেই ক্রসিং এরিয়ায় ঢুকে যায়। ঢুকে যাওয়ার ২/৩ সেকেন্ডের মধ্যে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন মুহূর্তের মধ্যে আমার করার কিছু ছিল না। ট্রেনে দ্রুত ব্রেক করতে গেলে ৪৪০ গজ দূরত্ব লাগে। মাইক্রোটি ছিল ১০০ গজের মধ্যে। তারপরও আমি দ্রুত ব্রেক করেছি। মাইক্রোবাস চালক যদি ক্রসিং পার হওয়ার আগে অন্তত ২-৩ সেকেন্ড অপেক্ষা করতেন তাহলে ট্রেনটি দেখতে পেতেন। তখন এতো বড়ো দুর্ঘটনার হাত থেকে নিশ্চিতভাবে রক্ষা পেতেন। খুবই অনুশোচনা হচ্ছে।












