মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম ও নাইট সাফারি পার্ক। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গৃহীত এই দুই প্রকল্পই চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত উন্নয়ন প্রকল্প। এরমধ্যে ২০২১ সালের নভেম্বরে মিনি সেক্রেটারিয়েট এবং ২০২২ সালের জুনে সাফারি পার্ক প্রকল্পের কাজ শুরুর ঘোষণা দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। কিন্তু দুই কারণে থমকে আছে প্রকল্প দুটির অগ্রগতি। এরমধ্যে মিনি সেক্রেটারিয়েট প্রকল্প নকশা চূড়ান্ত না হওয়ায় এবং প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গা নিয়ন্ত্রণে না আসায় নাইট সাফারি পার্ক প্রকল্প আটকা পড়েছে বলে জানান বর্তমান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
তিনি আজাদীকে বলেন, মিনি সেক্রেটারিয়েট প্রকল্পের নকশা করা হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর মংখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। তিনি দেখার পর এবং করণীয় ঠিক করে দেয়ার পর এটি চূড়ান্ত হবে। এরপর ডিপিপি প্রণয়নসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেয়া হবে।
নাইট সাফারি পার্কের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, নাইট সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্ট জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পটি বিশাল প্রকল্প। এটির জন্য নির্ধারিত জায়গা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। এখনো সেখানে অবৈধ বসতিরা অবস্থান করছে। তাদের উচ্ছেদ করার আগে প্রকল্পের অগ্রগতি আসবে না। আমরা খুব শীঘ্রই সেখানে অভিযান পরিচালনা করব এবং অবৈধদের উচ্ছেদ করে জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেব। চট্টগ্রামের এই দুই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হতে সময় লাগবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
মিনি সেক্রেটারিয়েট প্রকল্প : ২০২১ সালের নভেম্বরে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হামিদ চরের ৭৫ একর জায়গা জুড়ে ৪৪টি সমন্বিত সরকারি অফিস করার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার আদলে এটি নির্মাণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মূলত নগরে চাপ কমাতে ও সাধারণ মানুষকে এক জায়গায় সব ধরনের সেবা দিতে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
জানানো হয়, প্রকল্পের মধ্যে জুডিশিয়ারি বা আদালতের জন্য নির্ধারিত স্পেস, প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি স্যাটেলাইট অফিস, মেলার জন্য স্পেস, সার্কিট হাউস ও রিসোর্ট, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্পোর্টস কমপ্লেঙ, কনভেনশন সেন্টার, ক্লাব হাউস, শপিংমল, মাল্টি স্টোরেড কার পার্কিং, স্কুল–কলেজ, পরিবহন পুল, পেট্রোল পাম্প, স্মৃতিসৌধ, নভোথিয়েটার, মসজিদ, মুক্ত মঞ্চ ও কালচারাল কমপ্লেঙ, কনডোমিনিয়াম, সরকারি কর্মচারীদের আসাসিক এলাকা, ওয়াচ টাওয়ার, হাইটেক পার্ক, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী হাসপাতাল, ইউটিলিটি ভবন ও নার্সিং ইনস্টিটিউট থাকবে। এছাড়া নকশায় ক্যাবল কার, ওয়াটার বাস, এমনকি প্রকল্প এলাকার জন্য একটি কমন জেটিও যুক্ত করা হবে। আনোয়ারার যে এলাকায় কর্ণফুলী টানেল গিয়ে শেষ হয়েছে সেখান থেকে চান্দগাঁওয়ের হামিদ চর প্রকল্পে বা সমন্বিত প্রকল্পে যাবে ক্যাবল কার ও ওয়াটার বাস। আকাশ পথে ও নৌ পথে প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত করবে এ যানবাহনগুলো। এজন্য সেখানে নির্মাণ করা হবে একটি কমন জেটি। নকশায় কর্পোরেট অফিসের জন্য দুটি বা তিনটি ভবনও রাখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নাইট সাফারি পার্ক প্রকল্প : ২০২২ সালের ২৩ জুন নাইট সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্ট জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পের ঘোষণা দেয়া হয়। চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ঘোষণাটি দেন। তখন বলা হয়েছিল, জঙ্গল সলিমপুর থেকে অবৈধ বসবাসকারীরা চলে যাবে। এ এলাকা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী বহনকারী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সেখানে স্থানান্তর হবে। পুরো এলাকা একটি ইকো পার্কে পরিণত হবে। এ ইকো পার্কের ভেতরে থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক। যেটি সিঙ্গাপুরের মান্দাইতে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম নিশাচর নাইট সাফারি পার্কের আদলে ৪০ একর জায়গাজুড়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া সেখানে থাকবে স্পোর্টস ভিলেজ, মডেল মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটারসহ আরো অনেক কিছু। পাহাড়ের চূড়ায় কিছুই থাকবে না, পাহাড় ঘেঁষেও হবে না কোনো স্থাপনা। সবকিছু করা হবে সমতলেই। একই বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে বলেও জানানো হয়।