জাতীয় চা দিবস আজ। ‘চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প’ প্রতিপাদ্যে এবার দেশে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। দেশে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও তুলনামূলক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে। চা শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবহাওয়া অনেক বেশি উষ্ণ। এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় চা উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতি বছর তাপদাহের মাত্রা বাড়ছে। দক্ষ শ্রমিক–কর্মকর্তার অভাব এবং প্রতি বছরই শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে সিলেট অঞ্চলের প্রতিযোগীদের সঙ্গে টিকতে বেগ পেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা শিল্প মালিকদের।
চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৮৪০ সালে দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে চা উৎপাদন শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায়। গতবছর ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে রেকর্ড পরিমাণ মোট ৯ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা ২০২০ সালের চেয়ে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার কেজি বেশি। কেবল উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকেও ২০২১ রেকর্ড পরিমাণ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে, যার পরিমাণ ২০২০ সালে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি ছিল। জানতে চাইলে ফটিকছড়ির ভূজপুরের মোহাম্মদনগর টি এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান শিকদার টুটুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের আবহাওয়া চা উৎপাদনের জন্য অনুকূল নয়। শুধুমাত্র বৃষ্টির অভাবে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ চা গাছের চারা মারা যাচ্ছে। এছাড়া দক্ষ চা শ্রমিকের সংকট রয়েছে। আমাদের সিলেট থেকে শ্রমিক আনতে হচ্ছে। ফলে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন শ্রমিকদের যে মজুরি নির্ধারণ করেছে সেটিও বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একে তো দক্ষ শ্রমিকের অভাব, তার ওপর বেশি মজুরিতে তাদের দিয়ে কাজ করাতে হয়। আরেকটি বিষয় হল– পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাইপথে চা পাতা প্রবেশ করে বলে আমরা শুনে থাকি। সেটি যদি সত্যি হয়ে থাকে সরকারকে বিষয়টির দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ চোরাই পথে চা পাতা আসলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।
কাপ্তাই ওয়াগগাছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, চট্টগ্রামে ২০টি চা বাগান আছে। এরমধ্যে শীর্ষ তালিকায় আছে ৬–৭টির মতো। চা উৎপাদনে গত বছর সারা দেশে রেকর্ড হলেও চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে সেটি ছিল নিম্নমুখী। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, চট্টগ্রাম আবহাওয়া চা উৎপাদনের জন্য খুব বেশি সহায়ক নয়। চা উৎপাদনের জন্য আদর্শ জায়গা হল সিলেটের শ্রীমঙ্গল। ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় বেশি। বৃষ্টিতে চা পাতার কুঁড়ি বের হয়। এছাড়া শ্রীমঙ্গলে তীব্র তাপদাহ থাকে না। চট্টগ্রামে একে তো বৃষ্টিপাত কম হয়, এছাড়া তীব্র তাপদাহের কারণে চা পাতাও রুক্ষ হয়ে যায়। ফলে পাতার কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। আবহাওয়ার কারণে কেবল শ্রীমঙ্গলেই ৯০টি চা বাগান রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। আবার দক্ষ ব্যবস্থাপকের অভাবে ব্যবস্থাপনাগতও ঘাটতি রয়েছে। চট্টগ্রামে যেহেতু শ্রীমঙ্গলের তুলনায় প্রকৃতিগতভাবেই কিছু সমস্যা রয়েছে, তাই সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে বৃষ্টি না হলেও কৃত্রিম উপায়ে চা গাছের চারাতে নিয়ম করে পানি ছিটাতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাহলেই চা উৎপাদনে চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান। তিনি ৪ জুন ১৯৫৭ থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালনকালে চা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং চা বোর্ডে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে জাতীয় চা দিবস ঘোষণা করা হয়।