চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডের এবারের ফলাফল গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এজন্য ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল বিপর্যয়কে দায়ী করেছে শিক্ষা বোর্ড। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০২২ সালে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এবার জিপিএ–৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী; যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৯৩০ জন বেশি।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান। এবার ফলাফল প্রকাশে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। বোর্ডের চেয়ারম্যানরা একযোগে ফলাফল প্রকাশ করেন। এছাড়া ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২২ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন।
ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম। স্থগিত ফলাফলের ব্যাপারে তিনি বলেন, নানা কারণে আসলে পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়। স্থগিত শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে খতিয়ে দেখে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এবার চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ২৮২টি কলেজ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করে। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এই শিক্ষার্থীদের ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ পাস করেছে। এবার মোট ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছে; যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৯৩০ জন বেশি। গত বছর জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৩৯।
এবার সারা দেশে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮। আর এইচএসসির ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতকাল বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এ বছরের ফল প্রকাশ করা হয়। সব বোর্ডে মোট জিপিএ–৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।
এবার এইচএসসি ও সমমানের সাত বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাকি বিষয়ের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল পরীক্ষাগুলোর নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং করে)। এ বছর সব বিষয়ের পরীক্ষা না হওয়া এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে খারাপ ফলাফলে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দুই কারণে পাসের হার কমেছে বলে মন্তব্য করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান। তিনি আজাদীকে বলেন, সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। বিষয় ম্যাপিং করার কারণে জিপিএ–৫ বাড়লেও পাসের হারে প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল থাকায় বেশি অকৃতকার্য হয়েছে। যার কারণে মানবিকে পাসের হার কমে গেছে। গতানুগতিক কারণের বাইরে এ দুই কারণে এবার পাসের হার কমেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভাগভিত্তিক ফলাফলে এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের পাসের হার ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ। নগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৬৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। নগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
বরাবরের মতো এবারও ফলাফলে পিছিয়ে আছে তিন পার্বত্য জেলা। প্রতিবার পার্বত্য জেলার কলেজগুলো পিছিয়ে থাকার প্রভাব পড়ে ফলাফলেও। সে ধারায় এবারও মহানগরের চেয়ে পিছিয়ে পার্বত্য অঞ্চল। যদিও এর মধ্যে কিছুটা এগিয়ে রাঙামাটি আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছে খাগড়াছড়ি। তবে জেলাভিত্তিক পাসের হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কঙবাজার জেলা আর খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে কম। কঙবাজারে পাসের হার ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। রাঙামাটি জেলায় ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এবার জিপিএ–৫ বাড়ার ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যারা আগেও ভালো করেছে তারা একটু সুবিধা পেয়ে গেছে। আর মানবিক বিভাগে কোনো কারণে আগে ভালো করেনি, যে কারণে এবারও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে পিছিয়ে গেছে। এর সঙ্গে ইংরেজিতে খারাপ ফলাফলে তারা পিছিয়ে গেছে। জিপিএ–৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি।
জানা যায়, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। সাতটি বিষয়ের পরীক্ষার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর প্রথমে ১১ আগস্ট, পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।