দুই আ. লীগ নেতাকে মারধর করলেন সাবেক এমপি বদি

মারধর নয়, আত্মীয়দের শাসন করেছি : বদি ।। তদন্ত কমিটি গঠন উপজেলা আওয়ামী লীগের

টেকনাফ প্রতিনিধি | রবিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফে পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা সাংগঠনিক কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইউসুফ মনো ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ ভুট্টো। গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় সভা শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে ইফতারের আগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে গতকাল বিকাল ৩টায় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সভায় এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন। সভায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর। তিনি জানান, তদন্ত কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কমিটির নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে।

জানা যায়, সভা চলাকালে সাবেক এমপি বদি একপেশে সিদ্ধান্ত জানিয়ে কথা বলায় তার প্রতিবাদ করেন ইউসুফ মনো। এতে এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির রেশ ধরে জেলা সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা শাহ আলম চৌধুরীসহ সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি মঞ্চ ছেড়ে হল থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সভাস্থলে ঢুকে ইউসুফ মনোকে মারধর করতে থাকেন বদি ও তার ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর শুক্কুর। মারধর থামাতে এগিয়ে আসেন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ ভুট্টো। পরে তাকেও বেধড়ক মারধর করেন তারা।

এ সময় কক্সবাজার জেলা ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতৃবৃন্দ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, বদি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে বদির দাবি, মারধর নয়, তিনি তার ‘আত্মীয়দের শাসন করেছেন’।

ভিডিওতে দেখা যায়, সভা মঞ্চের আসন থেকে দাঁড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহ আলম ও কয়েকজন উত্তেজিত স্বরে কথা বলছেন। একপর্যায়ে সভা মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যান কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক এমপি বদি। এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন লোককে সঙ্গে নিয়ে তিনি আবার সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। বদি, তার ছোট ভাই আব্দুর শুক্কুরসহ কয়েকজন ইউসুফু মনোকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। ইউসুফ মনোকে বাঁচাতে যান ইউসুফ ভুট্টো ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হক। তাদেরও মারধর করতে দেখা যায় ভিডিও চিত্রে।

ইউসুফ মনো বলেন, পূর্বনির্ধারিত এই সভায় বদি পৌর কমিটির নেতাকর্মীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের প্রাধান্য দেন। আমি প্রতিবাদ করলে বদি ক্ষিপ্ত হন। পরে বদি, তার ভাই আব্দুর শুক্কুর ও ভাগ্নে নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজন আমার ওপর সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ইউসুফ ভুট্টো ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হক। হামলাকারীরা তাদেরও ব্যাপক মারধর করেন। তারা আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন বলে জানান তিনি।

সে সময় সভামঞ্চে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা শাহ আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দাশ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইউনুস বাঙ্গালী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরসহ জেলা-উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতারা।
আব্দুর রহমান বদি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে মারধর করিনি। যাদের মারধরের কথা বলা হচ্ছে, তারা আমার আপন মামাত ভাই ও মামাত বোনের স্বামী। জেলা কমিটির নেতাদের সামনে তারা অশোভন আচরণ করেছে। এতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণে আত্মীয় হিসেবে আমার ভাই ও ভগ্নিপতিকে শাসন করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির বেশিরভাগ বক্তব্য বানোয়াট
পরবর্তী নিবন্ধহাতাহাতিতে পণ্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান