চট্টগ্রামে যেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও খালি বাসা বরাদ্দ না দিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। আবার চাহিদা না থাকায় বছরের পর পর খালি পড়ে থাকছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় দুই শত বাসা। এসব খালি বাসায় বছরে কমপক্ষে পৌনে দুই কোটি টাকা সরকারি রাজস্বও বেহাত হচ্ছে। তাছাড়া নীতিমালা বহির্ভূতভাবে প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও অনেকে অপেক্ষাকৃত বড় বাসা ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, খালি বাসাগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। আবার যেগুলো বড় এবং চাহিদা রয়েছে সেগুলোর জন্য তদবির বেশি। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নগরীর বাটালি হিল, মেহেদীবাগ সিডিএ কলোনি, নাসিরাবাদ সিএন্ডবি কলোনি, আগ্রাবাদ বহুতলা কলোনি, শেরশাহ কলোনি, লালখান বাজার অফিসার্স কলোনি, গেজেটেড অফিসার হোস্টেল কলোনিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ১ হাজার ৭৮৫টি বাসা রয়েছে। এসব বাসা থেকে তালিকা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া হিসেবে বছরে প্রায় ১৫ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হওয়ার কথা রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে আগ্রাবাদ বহুতলা কলোনিতে ৯৩টি, শেরশাহ কলোনিতে ৭৬টিসহ সবমিলিয়ে ২৪১টি বাসা খালি রয়েছে। তন্মধ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাসা বরাদ্দ কমিটির সর্বশেষ সভায় ৪৭টি বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আরও বেশ কয়েকটি বাসা খালিও হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী, গড়ে দুইশ বাসা খালি থাকলে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে বছরে প্রায় এক কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা আয় কমে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের। অন্যদিকে আবেদনকারীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে প্রাপ্যতা অনুযায়ী আগ্রহী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা খালি হওয়ার তিন মাস আগে বরাদ্দ দিতে হয়। কিন্তু বহুতল সরকারি কলোনিতে উল্টো চিত্র। অনেকগুলো বাসা খালি পড়ে থাকলেও চাহিদা নেই। আবার যেসব বাসার চাহিদা রয়েছে সেগুলো বরাদ্দ না দিয়ে খালি ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সরকারি রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবাসন পরিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগ্রাবাদ বহুতলা সরকারি কলোনিতে ডি ৫/৩ এবং ৮/৪ বাসা দুটির জন্য মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র আমলারা পর্যন্ত ফোন দেন। যে কারণে বাসা বরাদ্দ কমিটি বাসা দুটি বরাদ্দ দিচ্ছেন না।’
সরকারি আবাসন পরিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক কাজী শহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে যেসব বাসার জন্য আবেদন পাওয়া যায়, সেগুলো নিয়ম মাফিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিছু বাসার চাহিদা বেশি। এসব বাসার জন্য ২০-৩০টি পর্যন্ত আবেদন পাওয়া যায়। তদবিরেরও কমতি থাকে না। যেগুলো খালি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবহার অনুপযোগী। এগুলোর জন্য আবেদন পাওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি বাসাগুলো ব্যবহার উপযোগী করা গেলে সরকারি রাজস্ব আহরণ আরও বেড়ে যেতো।’