দুইদিনে ফের দুই রোহিঙ্গা নেতা খুন

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

উখিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সাধারণ রোহিঙ্গা ও সংলগ্ন এলাকাবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কাকে কোন সময় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে প্রাণ দিতে হয় কেউ জানে না। কুতুপালং ও বালুখালীর ২১টি রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্প যেন প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে চলছে হামলা পাল্টা হামলা। খুনের বদলে খুনের ঘটনা।

গতকাল বুধবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং ২/ ডব্লিউ ক্যাম্পে ঘটেছে ওই ক্যাম্পের প্রধান মাঝি হত্যার ঘটনা। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ছৈয়দ হোসেন ওরফে কালা বদা (৪৮) নামে এ মাঝি নিহত হন। এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়ার ৯ নম্বর ক্যাম্পের ‘সি/৩’ ব্লকে এ ডা. ওয়াক্কাস (৪৫) নামের আরসার এক কমান্ডার খুন হন।

১৪আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন উর রশিদ জানান, মাঝি ছৈয়দ হোসেন সকালে ঘর থেকে বের হলে আরসার একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী অতর্কিতভাবে তাকে গুলি করে। এতে মুহূর্তেই মারা যান তিনি। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের অভিযান চলছে।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, কুতুপালং ২/ ডব্লিউ ক্যাম্পের হেডমাঝি ছৈয়দ হোসেন সকাল ৭ টার দিকে পার্শ্ববর্তী এ১২ ব্লকে একটি চায়ের দোকান নাস্তা করছিলেন। এ সময় ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে পালিয়ে যায়। লোকজন উদ্ধার করে তাকে ক্যাম্পের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রোহিঙ্গা নেতা ক্যাম্পের এ১০ ব্লকের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা জানান, হেড মাঝি কালা বদা ক্যাম্পে আরসার বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। সে কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গ্রুপ আবারও সক্রিয় হয়েছে। ফলে ক্যাম্পগুলোতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এ নিয়ে ক্যাম্পের লোকজন ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পে ডা. ওয়াক্কাস (৪৫) নামে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নুর হাবি ওরফে ওয়াক্কাস রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ আরসার ক্যাম্প কমান্ডার বলে এপিবিএন জানিয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়ার ৯ নম্বর ক্যাম্পের ‘সি/৩’ ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ওই ব্লকের মৌলভী ইয়াসিনের শেডের সামনে ২৫/৩০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। লোকজন গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। উখিয়া থানা এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ওসি। ওই ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, ওয়াক্কাসকে বুকে ও পিঠের পেছন দিক দিয়ে গুলি করে অস্ত্রধারী দুষ্কৃতকারীরা। ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে বলেও জানান মো. ফারুক আহমেদ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও দুস্কৃতকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরাজমান দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত দুইজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত পূর্বক ক্যাম্পে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি-জামাত সারা দেশে নাশকতার ছক এঁকেছে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার পরিবার পাবে টিসিবির পণ্য