দুইজনের কারাদণ্ড, ৬ জন খালাস

হোসাইনী দালানে বোমা ।। তদন্ত কর্মকর্তার ‘অবহেলায়’ হামলার হোতারাই বাইরে : আদালত

| বুধবার , ১৬ মার্চ, ২০২২ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

সাত বছর আগে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে শিয়া সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ- জেএমবির দুই সদস্যকে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায়ে বাকি ছয় আসামিকে খালাস দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
আসামিদের মধ্যে আরমান ওরফে মনিরকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিককে ৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুজনকেই জরিমানা করেছেন বিচারক। অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই আটজনের মধ্যে কবির হোসাইন, সজীব ও আরমানকে কারাগার থেকে এজলাসে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা বাকি পাঁচজনও রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আলোচিত এ মামলার রায় শুনতে আদালতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টেট কোর্টের ছয় সদস্য। আদালত ভবনের প্রবেশপথে ও বারান্দায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে বোমা হামলা হয়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (ইম্প্রোভাইজড এঙপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় এসআই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি চকবাজার থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে এর তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। আসামিদের মধ্যে আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলাটিতে ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, হোসাইনী দালানে হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। গত ১ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ : এদিকে হোসাইনী দালানে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও তদন্ত কর্মকর্তার ‘চরম অবহেলায়’ মূল পরিকল্পনাকারী আইনের আওতার ‘বাইরে রয়ে গেছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত। ট্র্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায় ঘোষণা করে বলেছেন, ‘শুধু আসামির সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই’ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলার চার আসামিকে বিচারের জন্য সোপর্দ করে ‘হয়রানি’ করেছে। আসামিদের খালাস দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক।
তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ‘মারাত্মক ভুল’ করেছেন এবং ‘চরমভাবে দায়িত্বে অবহেলার’ পরিচয় দিয়েছেন। পূর্ণ তদন্ত না করে মূল পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা আলবানী ও নোমান এবং গ্রেনেড হামলাকারী হিরণ ওরফে কামালকে এই মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করে এবং কোনো প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই আসামি চান মিয়া, ওমর ফারুক, ওরফে মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ এবং শাহজালাল মিয়াকে অত্র মামলায় আসামি হিসেবে সোপর্দ করে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ মারাত্মক ভুল করেছে এবং চরমভাবে দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। এর ফলে হোসাইনি দালান ইমাম বাড়ায় গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী নির্দেশদাতা ও হামলাকারী আইনের আওতার বাইরে রয়েছে।
বিচারক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার খামখেয়ালির কারণে চার আসামি হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং তারা শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তার শিবিরের ২২ নেতাকর্মী রিমান্ডে
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহরে জামাল হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার