অভাব–অনটনের সংসারে গরিব পিতাকে আর্থিক সহযোগিতার কথা চিন্তা করে পড়ালেখার পাশাপাশি জাল বুনা, বাজারে মাছ বিক্রির কাজ করতো শিশু শিক্ষার্থী প্রান্ত দাশ (১৪)। দরিদ্র জলদাশ পিতা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে দিনে দুবেলা স্থানীয় বাজারে নিয়ে যেত। তার সঙ্গে ছেলেও বাজারে এসে মাছ বিক্রি করতো। পড়ালেখার প্রতি প্রান্ত’র ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্র বাবাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তা আর সম্ভব হয়ে উঠতো না। শিশু শিক্ষার্থী প্রান্ত ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারতো না। একদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম মুরাদপুর বশরতনগর উপকুলীয় এলাকায় পরিদর্শনে গেলে সেখানে দরিদ্র পিতা নিমাই চন্দ্র দাশ ও তাঁর ছেলে প্রান্তের সাথে কথা হয়। শিশু শিক্ষার্থীর কাছে সব কথা শুনে তার পড়ালেখার জন্য বই কিনে দেয়ার আগ্রহ জানান নির্বাহী কর্মকর্তা। গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীর হাতে ১০ শ্রেণীর এক সেট বই তুলে দেন ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম। প্রান্ত আবারও স্কুলে ফিরবে এই আনন্দে সে আত্মহারা। নির্বাহী কর্মকর্তার এই মহানুভবতাকে সকলে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জানা যায়, প্রান্ত দাশ উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া গ্রামের নিমাই চন্দ্র দাশের ছেলে ও সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নিমাই চন্দ্রের তিন ছেলে। প্রান্ত হোসেন মেজো। অভাবের সংসারে অতিকষ্টে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছে প্রান্ত। সংসারের অভাব ঘুচাতে সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে পিতামাতার অনুমতি নিয়ে সাগরে মাছ ধরা, জাল বুনা এবং বাজারে মাছ বিক্রি করার কাজ নেয়।
প্রান্ত দাশ বলেন, নিয়মিত পড়ালেখা করতে মন জাগে। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে বই কিনতে পারি না। তাই পড়ালেখা ছেড়ে বাবাকে সহযোগিতা করি।
নিমাই চন্দ্র দাশ জানান, অভাব–অনটনের মধ্যেও দিন যাপন করছি। সাগরে এখন পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যায় না। যা পায় তা বিক্রি করে পরিবার চলে না। সেখানে ছেলেকে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাবো। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। ছেলেকে পড়ালেখার জন্য সহায়তা করার জন্য ইউএনও প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এ শিশুরাই একদিন দেশ গড়বে। আমি চেষ্টা করেছি ছেলেটি যাতে বিদ্যালয়মুখি হয়। আমি তাকে বই দিয়ে সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।