দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য

| শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে সরকারি অর্থে নির্মিত ঘর উপহার দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করছেন। ‘গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে’কবিতার এই মহান বাণীকে বুকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী মহৎ কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন, যা সত্যিই তুলনাহীন। গৃহপ্রাপ্তির কারণে সংশ্লিষ্টরা এখন নতুন করে তাদের জীবনকে সাজাতে পারবে। বলা যেতে পারে, তাদের পক্ষে এখন ভাগ্যবদল করা সহজ হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেগুলোর লক্ষ্য অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সরকারের এ উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য।

আমরা খুবই আনন্দিত যে, চট্টগ্রাম ও কঙবাজার জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মালিকানা হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।

আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলায় পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে আরো ২৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৫৫টি চন্দনাইশের, ৩৪টি মীরসরাইয়ে, ১৬টি সন্দ্বীপ ও ৪৫টি সীতাকুণ্ডের বাসিন্দারা বরাদ্দ পেয়েছেন। এ চার উপজেলাসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলাকে সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনভুক্তও ঘোষণা করা হয়েছে। আর কক্সবাজারের সদর উপজেলায় ৭৫টি, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৪৬টি এবং মহেশখালী উপজেলায় ৪০টিসহ মোট ২৬১টি পরিবারের মাঝে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে সীতাকুণ্ড প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চন্দনাইশে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মালেক। এছাড়া মীরসরাই ও সন্দ্বীপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন; সাহস জুগিয়েছিলেন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশের কোনো অসহায় মানুষকে যেন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে না হয়। যেন কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে না হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই যেন হয়। সেই লক্ষ্যেই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জমি ও বাড়ির মালিক বানিয়েছেন। বাড়িয়েছেন তাদের সামাজিক মর্যাদা। বিশ্লেষকরা বলেন, ‘এই বাড়ি এখন তাই কেবল তাদের ঠিকানা নয়, আত্মমর্যাদা আর সম্মানেরও প্রতীক। ক্রমান্বয়ে বাকি সব পিছিয়ে পড়া মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তখন বিস্ময়ভরা চোখে সারা পৃথিবী দেখবে বিশ্বের বুকে জেগে উঠছে এক নতুন বদ্বীপ বাংলাদেশ। হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে জড়িয়ে যাওয়া বন্যা, ঝড়, খরা ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাড়িয়ে তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হলো এত মানুষকে ঘর দিতে পারাএটা অনেক আনন্দের। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই এত বড় অসাধ্য সাধন হয়েছে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তাদের কর্মসংস্থান যদি একই স্থানে না হয় তাহলে এই উদ্যোগের সুফল অনেক ক্ষেত্রে নাও পাওয়া যেতে পারে। যাদের ঘর দেয়ার জন্য বাছাই করা হলো, তাদের যদি ঐ এলাকাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। নইলে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের এই কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।

তাঁরা বলেন, আমাদের প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে মানুষ কিন্তু যেখানে কাজ সেখানে থাকতে চায়। যখন মানুষের গ্রামে কাজ না থাকে তারা তখন বাড়িঘর ফেলে শহরে চলে যায়। শহরে যেয়ে তারা কাজের খোঁজ করে এবং বাড়িঘরে তালা মারা থাকে। সেক্ষেত্রে এটা কোন কাজে লাগবে না। তবে কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণের সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছর যাতে তারা ঘর বিক্রি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার খাস জমির বন্দোবস্ত করলে সেটা আর বিক্রি করা যায় না। অর্থাৎ যারা আজ ঘর পেয়েছেন তারা এই ঘর বিক্রি করতে পারবেন না।

ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব কাজ সম্পাদন করেছেন, যা সত্যি আনন্দের। মানুষগুলো যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্যও যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে