কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে নগরীর সকল অসমাপ্ত ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নগরীর সকল ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৪ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ নির্দেশনা দেন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী নগরীর চান্দগাঁও থানার ৫ নং মোহরা ওয়ার্ডের ক, খ ও গ ইউনিট আওয়ামী লীগের কর্মীসভা ঘিরে পাল্টাপাল্টি সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। এছাড়া গতকাল দুই পক্ষের হট্টগোলে পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাও পণ্ড হয়ে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর মোহরা ওয়ার্ডের ক, খ ও গ ইউনিটের কর্মীসভা করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে (নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও স্থানীয় এমপি আবদুচ ছালামের অনুসারী) বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা সভা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা।
একাংশের নেতারা ১২ জুলাই সন্ধ্যায় মোহরা ওয়ার্ডের গ ইউনিটের কর্মীসভা আহ্বান করেন। সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে বাদ দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সভাস্থলে বিক্ষোভ করেছেন এই অংশের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষের মধ্যে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি হতে পারে–এমন আশঙ্কায় চান্দগাঁও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করায়। এ সময় পুলিশ স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী নূরুল আমিনকে বলেন বিক্ষোভকারীদের বাইরে নিয়ে যেতে। কাজী নূরুল আমিন বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে চলে আসেন। উল্লেখ্য, চান্দগাঁও আওয়ামী লীগের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক হলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এই থানার সকল ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির কর্মীসভা থেকে শুরু করে প্রস্তুতি সভা এবং সর্বশেষ সম্মেলন করার দায়িত্ব তার। একইসাথে স্থানীয় এমপি হিসেবে প্রতিটি সভা এবং সম্মেলনে আবদুচ ছালামের থাকার কথা। অথচ একটি গ্রুপ দুই শীর্ষ নেতা এবং তাদের অনুসারীদের বাদ দিয়ে কর্মীসভা করে সম্মেলন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য কাউন্সিলর কাজী নূরুল আমিন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ওলিদ চৌধুরী।
অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ হোসেন খান মাসুক। তিনি বলেন, যারা প্রতিবাদ করছেন তারা মহানগর আওয়ামী লীগ কর্তৃক অনুমোদিত কমিটির কেউ না। আর তারা তো গত সপ্তাহে আমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজেরা ৩ ইউনিটের সম্মেলন প্রস্তুতির সভা করেছেন।
ক ও খ ইউনিটের কর্মীসভা ঘিরে পাল্টাপাল্টি : শুক্রবারের রেশ না কাটতেই গতকাল শনিবার বিকাল ৫টায় মোহরা ওয়ার্ডের ক ইউনিট এবং সন্ধ্যা ৭টায় খ ইউনিটের সভা আহ্বান করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে। এই ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আবদুচ ছালামের অনুসারীরা।
গ ইউনিটের মতো গতকাল সন্ধ্যায় মোহরা ৫ নং ওয়ার্ডের ক ও খ ইউনিট আওয়ামী লীগের কর্মীসভা আহ্বান করেন আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। গ ইউনিটের মতো ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে ক ও খ ইউনিটের কর্মীসভা আহ্বান করায় এই কর্মীসভা বাতিলের দাবিতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন রেজাউল ও ছালামের অনুসারীরা। এই অংশের নেতাকর্মীদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবৈধ কর্মীসভা আহ্বানের প্রতিবাদে খ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উসমান গণির সভাপতিত্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৫টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য এস এম আনোয়ার মির্জা, মো. ফারুক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নূরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সেকান্দর চৌধুরী, হাজী আবু তাহের, ওলিদ চৌধুরী, জমির উদ্দিন, হাসান মুরাদ চৌধুরী, আবুল কাশেম, আবুল কাশেম বাদশা, হানিফ খান, পংকজ চৌধুরী, তাপস চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিবু প্রসাদ, ক ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম খান, সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন বিটু, জামশেদ চৌধুরী, রিদুয়ান, নূরুল আবছার, পারভেজ, তসলিম, কফিল উদ্দিন, মো. ইসহাক, আরজু, খোকন, মামুনুর রশিদ, মো. হোসেন প্রমুখ।
যারা প্রতিবাদ করছেন তারা বৈধ কমিটির কেউ না : মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ হোসেন খান মাসুক বলেন, যারা প্রতিবাদ করছেন তারা তো মহানগর আওয়ামী লীগ অনুমোদিত কমিটির কেউ না। মহানগর আওয়ামী লীগের গত ২০ জুনের বর্ধিত সভায় যারা দাওয়াত পেয়েছিলেন তারাই বৈধ কমিটি। আমরা তো বৈধ কমিটি হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গিয়েছি। যারা প্রতিবাদ করছেন তারা ইউনিট কমিটি করে গত সপ্তাহে তিন ইউনিটের সম্মেলন প্রস্তুতির সভাও করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের থানার সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল করিম চৌধুরী আমাদেরকে বলেছেন সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করে সভা করার জন্য। তিনি আমাদের পক্ষের ৩ জন এবং ওদের পক্ষের ৩ জনকে নিয়ে সমন্বয় করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ গত সপ্তাহে আমাদের ৩ জনকে বাদ দিয়ে তিন ইউনিটের সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা করেছে। আমাদেরকে বাদ দিয়ে সভা করায় আমাদের পক্ষের নেতাকর্মীরা আমাদের চাপ দিয়েছেন কর্মীসভা করার জন্য। আমরা বিষয়টি মেয়র সাহেবকে জানিয়েছি। আমরা তিন ইউনিটের কর্মীসভা শেষ করেছি। এখন সম্মেলনের জন্য মেয়র রেজাউল করিম ভাইয়ের সাথে দেখা করব।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার গ ইউনিটের কর্মীসভা করেছি। আজ (গতকাল) বিকাল ৫টায় খ ইউনিটের সভা অনুষ্ঠিত হয় এল খান উচ্চ বিদ্যালয়ে। সন্ধ্যা ৭টায় ক ইউনিটের কর্মীসভা করেছি। সভায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ হোসেন খান মাসুক, যুগ্ম আহ্বায়ক জসীম উদ্দিনসহ ক ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি আইযুব আলী চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক রফিক এলাহী, খ ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি সরোয়ার বাবু, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ডেও হট্টগোল, সভা পণ্ড : ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু দুই গ্রুপের হট্টগোলে তা পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আলী বক্স এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়ের সভা আহ্বান করেন। এ সময় কমিটির সহসভাপতি মো. আবছার উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ, শাহীন সরোয়ার, ইকবাল হোসেন, সাজ্জাদ হোসেনসহ একাংশের নেতারা ইউনিট কমিটির সমস্যা নিরসন না করে সম্মেলন করা যাবে না বলে প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। তবে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভার কাজ শেষ হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইসহাক, ওয়ার্ডের সিনিয়ার সহসভাপতি হাজী শওকত আলী, নুরুল আবসার, আফসার উদ্দিন, হাজী আবদুল হামিদ, হাজী দানু মিয়া, শাহীন সরওয়ার, মো. আলী, মো. ইকবাল হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন ও নূরে আলমগীর চৌধুরী।