দীর্ঘস্থায়ী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। আসন্ন শীতে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা চলে এসেছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার হার কম। শহরেও বেশিরভাগ মানুষ সভা, সেমিনার, যানবাহনে মাস্ক পরছেন না। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ১৯৯তম দিনটি ছিল গত মঙ্গলবার। সেদিন সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অপরদিকে শীতকালে দেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা এলেও লকডাউনে না গিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কর্মপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার। কারণ লকডাউনে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া পরবর্তী অবস্থা পর্যালোচনা করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সভায় বলা হয়েছে, অক্টোবর-নভেম্বরে শীতের প্রকোপ বাড়লে কোভিডের সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে এবং তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরবর্তী সময়ে সেগুলোকে সমন্বয় করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আবার না-ও পারে। এটা কেউ নিশ্চিত করতে বলতে পারে না। করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে সবই অনুমানভিত্তিক। শীতের দেশেও হয়েছে, আবার গরমের দেশেও হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। যে পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যায় সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।