দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়রা দাবি জানিয়ে আসছিল, দ্রুত সংস্কার করা হোক বিমানবন্দর সড়ক। ভাঙা সড়কটিতে প্রায় ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অনেকে। প্রাণহানি ঘটতে পারে-এমন শঙ্কা থেকে সড়কটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছিল। এছাড়া সতর্ক করেছিল সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) চিঠি দিয়েছিল সিডিএকে। এত কিছুরও পরও টেকসই সংস্কার করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিনের শঙ্কা সত্যি হলো। ভাঙা সড়কের জন্য সৃষ্ট দুর্ঘটনায় গতকাল প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যক্তি ও তার নয় মাস বয়সী সন্তান। একই পরিবারের দুজনের প্রাণহানির পর আবারও আলোচনায় এসেছে ভাঙা সড়কটিকে ঘিরে জনদুর্ভোগের বিষয়টি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুয়েক বছর ধরে বেহাল এ সড়কের অবস্থা। প্রাণহানি না ঘটলেও এ সড়কে দুর্ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়া ভাঙা সড়কে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। এতে নষ্ট হচ্ছে সময়। বিমানযাত্রীসহ অফিসগামী অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে পারছে না গন্তব্যে।
জানা গেছে, সড়কটিতে সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বা স্প্যান স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এরপর পিলার স্থাপন হলেও গোড়া ভরাট না করায় চর্তুদিকে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ধীরে ধীরে তা বড় হয়েছে। ফলে নষ্ট হয়েছে সড়ক। জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সিডিএকে চিঠি দিয়েছিল চসিক। চিঠিতে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ সমাপ্তি শেষে তা সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সময়কালে জনস্বার্থে সড়কটির সংস্কার জরুরি ভিত্তিতে সিডিএর মাধ্যমে সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হয়।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষে সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিডিএর। এ জন্য এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পে আলাদা বরাদ্দও আছে। তাই বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের এখতিয়ারও চসিকের নেই বলে এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের ব্যারিস্টার কলেজ মোড়, ইপিজেড মোড়, ইপিজেড কাঁচাবাজার, বে সিটি মেডিকেল সার্ভিস ও চৌধুরী মার্কেটের পূর্ব পাশে, বে শপিংয়ের কোনায় ইপিজেডে প্রবেশ মুখে, সল্টগোলা থেকে ইপিজেডে যেতে নবনির্মিত সিডিএ মার্কেটের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ, লায়লা সিএনজি থেকে ঈসা খাঁ গেট পর্যন্ত অংশের সড়কে ছোট-বড় গর্ত হয়ে আছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ধুলোবালি উড়ছে।
হাসান রিফাত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, বিমানবন্দর সড়কের আকমল আলী রোডের সামনে, সিমেন্ট ক্রসিং মোড়, নেভি গেট, মাইলের মাথা ও বন্দরটিলা এলাকায় অবস্থা বেশি খারাপ। বেশ কিছুদিন সড়কটির কিছু কিছু অংশ ঠিক করা হয়েছিল। তবে কিছুদিন না যেতেই আবারো খারাপ হয়ে গেছে। তিনি জানান, কয়েক জায়গায় ফুটপাতের উপর ব্যবসায়ীরা মালামাল রেখেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে লোকজন রাস্তা দিয়ে হাঁটে। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। আবার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
বন্দরটিলা আলী শাহ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে। ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
বাস ড্রাইভার সেলিম বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে সড়কের এ বেহাল দশা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগে থাকে।
জানা গেছে, সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এছাড়া সড়কটি ঘিরে জনভোগান্তির বিষয় নিয়ে আজাদীতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাস্তার কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। তবে এ সংস্কার টেকসই হয়নি। ফলে আগের অবস্থায় ফিরে যায় সড়কটি।
জানা গেছে, গত বছর সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক প্রতিবেদনে সড়কটির বেহাল দশার জন্য ৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে সড়কে খানাখন্দ থাকায় একাধিক সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দুর্ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাওয়া, রাস্তায় জলাবদ্ধতা হওয়া এবং সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজের প্রভাবে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না করা, নির্মাণাধীন এঙপ্রেসওয়ের পিলারের গোড়া ভরাট না করা এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারণেও সড়কটি নষ্ট হচ্ছে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায় লালখান বাজার-বিমানবন্দর চার লেনের এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটির নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত করার কথা জানায় সিডিএ।