স্বামী বিবেকানন্দের কথায়, ‘জন্মেছিস যখন দাগ রেখে যা’। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো যুবক আবু সাঈদের ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে! সেই ছবি তীব্র থেকে তীব্রতম অভিঘাত তৈরি করেছে সাম্প্রতিককালে।
কবি হেলাল হাফিজের মতো করে বললে, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। গেল জুন মাস থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’। জুনে যে আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছিল, জুলাইয়ের প্রথম থেকে তা দাবানলের মতো ছড়াতে থাকে। দেশের বিভিন্ন পান্ত থেকে ছাত্র–ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আসে।
তাঁদেরই একজন ছিলেন আবু সাঈদ। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল, আবু সাঈদ ছিলেন তার একেবারে অগ্রভাগে। যদিও তাঁকে দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি, এই সাদামাটা চেহারার তরুণ ঐ ভাবে বুক টান করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। মনে হয়নি, তাঁর দেহের সমান্তরালে প্রসারিত দু’হাতে ধরা থাকবে নীরব এবং অহিংস প্রতিবাদের অদৃশ্য নিশান। ভাবতে অবাক লাগে, এমন একজন মানুষও বেঁচে ছিলেন আমাদের এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে! বাংলাদেশে সবচাইতে সস্তা বোধহয় মানুষের প্রাণ! কিন্তু এভাবে আর কতবার বুকের রক্ত দিয়ে ন্যায্যতার দাম মেটাতে হবে? কেন বারবার দুষ্টের দমনে শিষ্টেরই বলিদান হয়? কেন আবু সাঈদের মতো ঝলমলে নক্ষত্রের আলো ছড়াবার আগেই মৃত্যু ঘটে? এভাবে ওদের চলে যাওয়া যে বিবেকের কাছে আমাদের বড্ড অপরাধী করে দেয়।