দীপু মনি চার ও জয় পাঁচ দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগানে ফাঁসির দাবি, কাঁদলেন দীপু মনি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২১ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে চার দিন এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এর আগে দীপু মনি ও জয়ের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। আবু সায়েদ হত্যা মামলাটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রথম মামলা। দীপু মনি ও জয়কে আদালতে নেওয়ার পথে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাদের ওপর হামলা করেন। আর রিমান্ড শুনানির আগে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিলেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তিনবারের মন্ত্রী দীপু মনিকে এদিন আদালতে কাঁদতে দেখা গেল। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

রিমান্ডের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিমকে হত্যায় হুকুমদানকারী, উসকানিদানকারী ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের নামসহ মামলার ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং মামলার ঘটনার সহিত জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করার জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে দীপু মনিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকা মহানগর পুলিশ ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে আরিফ খান জয়কে গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

আদালত প্রাঙ্গণে দীপু মনি ও জয়ের ওপর হামলা : ডা. দীপু মনি ও আরিফ খান জয়কে আদালতে নেওয়ার পথে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাদের ওপর হামলা করেন। গতকাল বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে বেলা পৌনে ৪টার দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়।

তাদের আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ও কিছু সাধারণ মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। দীপু মনি ও আরিফ খান জয়কে যখন সিএমএম আদালতের গেট দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন একজন রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তিনি দীপু মনির ফাঁসির দাবি জানান। পরে সেখান থেকে উঠে গেলে তাদের নিয়ে গাড়ি চলে যায় সিএমএম আদালতের হাজতখানায়। বেলা পৌনে ৪টার দিকে তাদের হেলমেট পরিয়ে হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলা হয়।

আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে তাদের এজলাসে তুলতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইনজীবীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে তাদের আদালতের দ্বিতীয় তলায় তোলা হয়। একপর্যায়ে এজলাসে তাকে কাঁদতে দেখা যায়।

শুনানির শুরুতে আসামিকে কেন হাতকড়া পরানো হয়নি, তা নিয়ে ক্ষোভ জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তখন তাদের জানানো হয়, জয়ের হাতে হাতকড়া আছে। দীপু মনি মহিলা হওয়ায় তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি।

এজলাসে আইনজীবীদের হইহুল্লোড়ের মধ্যেই শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাও ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। এরই মাঝে তাদের পক্ষে একজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে জয় আদালতের উদ্দেশ্যে কথা বলতে যান। এ সময় তীব্র বিরোধিতা করেন উপস্থিত আইনজীবীরা। তারা চিৎকার, হইহুল্লোড় করতে থাকেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, তারা এজাহার নামীয় আসামি নয়, সন্ধিগ্ধ আসামিকে হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহিলা হওয়ায় দীপু মনির চারদিন এবং আরিফ খান জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। এতে সন্তুষ্ট হননি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তার ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। এরই মাঝে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। এরপর দীপু মনি ও আরিফ খান জয়কে নিচে নামানো হয়। এরই মাঝে তাদের ওপর হামলা করেন আইনজীবীরা। এ সময় দীপু মনি চিৎকার করে উঠেন। আর জয় তাকিয়ে দেখেন। পরে দ্রুত তাদের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

স্লোগানে উঠল ফাঁসির দাবি : দীপু মনি ও আরিফ খান জয়ের রিমান্ড শুনানির আগে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিলেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা; তিনবারের মন্ত্রী দীপু মনিকে এদিন আদালতে কাঁদতে দেখা গেল।

দিপু মনি ও জয়ের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আটক আসামীদ্বয়ের সংযোগ আছে। হত্যায় হুকুমদানকারী ও উসকানিদাতাদের নামসহ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

তার বক্তব্য শেষে আসামি পক্ষে কেউ আছেন কিনা জানতে চান বিচারক। আওয়ামী লীগপন্থি কোনো আইনজীবীকে এ সময় এজলাসে দেখা যায়নি। বিএনপিপন্থী আইনজীবী আতাউর রহমান তখন বলেন, আমি আসামিপক্ষে শুনানি করব। তিনি বলেন, আমি উভয় আসামির জামিন চাই।

শুনানি চলাকালেও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে কাঁদতে দেখা যায়। জয় কিছু বলতে চাইলেও আদালত তাকে কথা বলার অনুমতি দেয়নি। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ সময় আরেক দফা হট্টগোল করেন। তারা ‘খুনি, খুনি’ বলে চিকৎকার করতে থাকেন।

পরে ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিচারক বলেন, আটক আসামিরা এজাহারভুক্ত আসামি নয়। তবে ঘটনার নির্মমতা এবং মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় দীপু মনিকে চার দিনেরৃ। বিচারক এ কথা বলার পর আবারও হট্টগোল শুরু করেন উপস্থিত আইনজীবীরা।

বিচারক নেমে যাওয়ার পর কাঠগড়ায় থাকা দীপু মনিকে আক্রমণ করার জন্য এক নারী আইনজীবী তেড়ে গেলে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় এজলাসে আইনজীবীদের বসার বেঞ্চে দাঁড়িয়ে হট্টগোল করতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। প্রায় ১৫ মিনিট কাঠগড়ায় অবরুদ্ধ থাকার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দীপু মনি ও জয়কে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্যে সোমবার দীপু মনি ও জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, গত ১৩ আগস্ট তা দায়ের করেন আমির হামজা শাতিল নামের এক ব্যক্তি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ছয়জনের নাম রয়েছে এ মামলার আসামির তালিকায়। বাকি পাঁচজন হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এছাড়া পুলিশের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় সামশুল হক ও মোতাহেরসহ ৩৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধরেলের টিকিট কালোবাজারি রোধে গঠন হচ্ছে টাস্কফোর্স