প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের প্রভাবশালী তিন সদস্য কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী এবং তার ছেলে রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি পার্টির সভাপতি, রাহুল দলটির সাবেক সভাপতি ও অন্যতম নীতিনির্ধারক এবং প্রিয়াঙ্কা দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খবর বিডিনিউজের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার দিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিজয়ের পর রোববার ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, শেখ হাসিনা ও গান্ধী পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস তাদের পূর্বপুরুষদের হাত ধরে তৈরি। শেখ হাসিনার পিতা বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বাংলাদেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; যা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের এক ফাঁকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে তাদের সৌজন্য বিনিময় করার খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
ভারতের সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩টি এবং বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট ২৩৪টি আসনে জিতেছে। ২৪০টি আসন নিয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিজেপি এবং ৯৯টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসতে চলেছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা হচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। এককভাবে জয় না পাওয়ায় কয়েকদিন ধরে আলাপ–আলোচনা করে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের দিন ঠিক করে বিজেপি।
রোববার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে সঙ্গে নিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টও ছিলেন অতিথিদের মধ্যে।
পর্যটন খাতে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাতৃপ্রতীম দুই দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ চেয়েছেন। গতকাল সকালে দিল্লিতে তাঁর আবাসস্থলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, পর্যটন খাতে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বাংলাদেশের পর্যটন খাতে কীভাবে আসতে পারে তা নিয়ে দুই নেতা আলাপ আলোচনা করেন। দুই নেতা কৃষি এবং সমুদ্রে জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বৈঠকটি মূলত সৌজন্য সাক্ষাত হলেও দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তার দেশের সংকটময় মুহূর্তে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। জবাবে বিক্রমাসিংহে বলেন, বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে তার আকাঙ্ক্ষা আছে, তবে সামনে তার দেশে নির্বাচন।
এর আগে রোববার সকালে শেখ হাসিনা বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা এল কে আদভানির সঙ্গে তার নয়াদিল্লির বাসভবনে দেখা করেন এবং কুশল বিনিময় করেন। ওইদিন বিকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।