ভয়াবহ রকমের লোডশেডিংয়ের কবলে চট্টগ্রাম। চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও পিডিবি বিদ্যুতের লোডশেডিং শিডিউল রক্ষা করতে পারছে না। এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও এক ঘণ্টা করে সকাল-সন্ধ্যা এবং রাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দেড় হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। কিন্তু চট্টগ্রামে বর্তমানে গড়ে ৯শ’ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ন্যাশনাল গ্রিডে দেয়া হয়। ন্যাশনাল গ্রিড ঘুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ আসে চট্টগ্রামে। গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রামে।
অফ পিক আওয়ারে এই চাহিদা কমে ১২শ’ মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে আসে। চট্টগ্রামের সাড়ে ৪০০ ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়।
চট্টগ্রামে ৪৫০টি গার্মেন্টসসহ ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ৪৭০টি কারখানায় বিদ্যুতের যোগান দিতে হয়। গার্মেন্টসগুলোর মধ্যে প্রায় ২শ’ কারখানা কোটি কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করে। এর বাইরেও সিমেন্ট, টেঙটাইল, স্টিল, প্লাস্টিক মিলে প্রায় ১২শ’ কারখানা রয়েছে। যেখানে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। এ সব কারখানাকে রেশনিংয়ের আওতায় আনতে হলে রপ্তানিসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে কারখানাগুলোকে কিছুটা বাড়তি সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান।
দেশে গ্যাস এবং বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা ছিল। উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাবস্টেশনে ৫ থেকে ৭ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করার কথা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে বলে স্বীকার করে পিডিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনোভাবেই সিডিউল রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনে রাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনের মধ্যে পাঁচ সাতবারও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চাহিদার এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুতের অভাবে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেছেন, পূজার মাঝে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদন সেভাবে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসের সংকট রয়েছে। রাউজানের একটিসহ গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে লোডশেডিং সিডিউল রক্ষা করা কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছে না বলেও কর্মকর্তারা জানান। পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিডিউল রক্ষা করতে হলে চাহিদা এবং যোগানের একটি হিসাব থাকতে হয়। এখন আমরা ঠিক কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবো তার কোনো আগাম হিসাব পাই না। যখন যা পাই তা ভাগ করে দিয়ে দিই। এতে কোনো কোনো এলাকা বাড়তি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।