দিনে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, রাতে ছিনতাইকারীদের বাহন

গ্রেপ্তার ৫, কার জব্দ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ

দিনের বেলায় যে গাড়ি দিয়ে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, বিকাল গড়াতেই তা হয়ে উঠত ছিনতাইকারীদের বাহন। গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে চলত ছিনতাই। এভাবে মাসখানেক চলার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ৫ জন। তাদের থেকে উদ্ধার করা মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানা যায়, কয়েকদিন আগে সেটি এক ব্যক্তির কাছ থেকে হালিশহর এলাকায় ছিনতাই করা হয়েছিল।

সংঘবদ্ধ এই দলটি নগরীর হালিশহর, ডবলমুরিং, আকবরশাহ, লালদিঘির পাড়, পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ছিনতাই করে আসছে। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর আজাদীকে জানান, এক মাস ধরে প্রাইভেটকারে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাইভেটকার ও সিএনজিতে করে ঘুরে বেড়ায় এবং সুযোগ বুঝে রামদা, টিপ ছোরার ভয় দেখিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই ও ডাকাতি করত। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য একেক সময় গাড়ির নম্বর প্লেটের যে কোনো দুটি সংখ্যার ওপর স্কচটেপ আটকে হাতে লেখা দুটি সংখ্যাও লাগিয়ে দেয় তারা।

গত সোমবার কোতোয়ালী থানায় গোপনে খবর আসে, নগরীর পলোগ্রাউন্ড যুবসংঘ ক্লাব সংলগ্ন পাকা রাস্তার ওপর একটি প্রাইভেটকার ও একটি সিএনজি টেঙিতে বেশ কয়েকজন লোক সন্দেহজনকভাবে অবস্থান নিয়েছে। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে কোতোয়ালী থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে গুপ্তচরের দেওয়া তথ্য অনুসারে নেভি ব্লু রঙের একটি করোলা প্রাইভেটকার ও সিএনজি টেঙি দেখতে পায়। পুলিশ সদস্যরা এ সময় সেখানে ৭৮ জন লোককে একসঙ্গে দেখার পর এগিয়ে যাওয়া মাত্রই ৩/৪ জন সিএনজি টেঙি নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে সন্দেহভাজন ৪ জনকে প্রাইভেটকারসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

এ সময় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে একটি রামদা, একটি নম্বর প্লেট, গাড়ির নম্বর প্লেটের সংখ্যা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত দুটি সংখ্যায় লেখা স্কচটেপ মোড়ানো কাগজের টুকরো, প্লাস্টিকের বাটযুক্ত একটি পুরাতন স্ক্রু ড্রাইভার, নেভি ব্লু রঙের একটি ট্রাভেল ব্যাগ, একটি টিপ ছোরা ও ফোল্ডিং ছোরা, ছিনতাই করা একটি করে মুঠোফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বাঁশখালী প্রেমবাজার মলার পাড়ার দেলোয়ার হোসেন (২১), রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাজ্জাদ হোসেন (২৪), চকরিয়া ৬ নং ওয়ার্ড বেতুয়া বাজারের মো. ফরহাদ প্রকাশ দিদার (২৪) ও হাটহাজারীর বুড়িশ্চরের আসিফ হোসেন (২১)। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, অভিযান চলাকালে পালানো কয়েকজনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান ওরফে আদনান (২৩) ও সফিউল আজম নয়ন (২৫) ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো দুজন ছিলেন।

এরপর রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাটসহ মোহরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাহফুজুর রহমান ওরফে আদনানকে গ্রেপ্তার করে। তবে সেখানে থাকা সফিউল আজম নয়ন (২৫) কৌশলে পালিয়ে যান। মাহফুজুরের বাড়ি হাটহাজারী কুয়াইশ কলেজের পিছনে। এ ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এসআই মেহেদি জানান, যে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটির মালিক গ্রেপ্তার আসিফ। তিনি দিনের বেলায় গাড়িটি দিয়ে ড্রাইভিং শেখাতেন। আর বিকালের পর ছিনতাইয়ের কাজে গাড়িটি ব্যবহার করতেন। আসিফ পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়িটি ছিনতাইয়ের কাজে ভাড়া দিতেন। আবার ছিনতাইয়ের পর গাড়ি চালানোর কাজ হিসেবে ভাগের একটি অংশ পেতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাকলিয়া এক্সেস রোড চালু হচ্ছে মার্চে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে পাচ্ছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার পরিবার