চেয়ে চেয়ে দেখলাম মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে সে দৌড় দিলো। কত আর বয়স! পনেরো, ষোলো! মনে হলো আমিও দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলি! কিন্তু একটু পরেই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। কী অদ্ভুত! মাত্র কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে আমি হারালাম ভীষণ দরকারি আর প্রিয় জিনিসটা। উপরের অংশটুকু আমার নয়। আমার এক সাবেক সহকর্মী জোহরা ফেইসবুকে লিখেছেন। এভাবে প্রিয় জিনিস হারানোর বেদনা আমাদের অনেকের। আমিও তেমন এক অভিজ্ঞতার স্বাদ পেয়েছিলাম আট বছর আগে।
বাস্তব গল্পটা এ রকম। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মানে প্রিয় সায়ীদ স্যার চট্টগ্রাম আসবেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পুরস্কার বিতরণ উৎসবে আর কেন্দ্রের কর্মীদের নিয়ে খাওয়ার আয়োজন হবে আমার বাসায়। সে উপলক্ষে বাজার করে ফিরছি স্টেশন রোড হয়ে রিক্সায়। আমার ভাইঝি ফারনাজের ফোন আসাতে ফোনটি ধরতে হলো। ওপার থেকে ফারনাজের এক্সট্রা অর্ডিনারী ফলাফল জেনে মন পুলকিত হলো। কিন্তু অভিনন্দন জানানোর সময়টুকু পেলাম না। রাস্তার ডিভাইডার থেকে একজন ফোন কেড়ে নিয়ে দৌড়। আমিও রিক্সা থেকে নেমে দিলাম দৌড়। আমি ঝাপটাবাজকে ধরে ফেললাম। ততক্ষণে ও মোবাইল তার সহযোগী অন্য একজনকে পাস করে দিয়েছে। আমি ঝাপটাবাজকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গেলাম। কোতোয়ালি থানা আমার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করলো। জানতে চাইলো ফোনের বাক্স আছে কিনা। আমি বললাম আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বললেন নিয়ে আসেন। আমি বাসায় গিয়ে নিয়ে আসলাম। থানায় জানতে চাইলাম ঝাপটাবাজ কই। বললো ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জিগ্যেস করলাম কেন? বললো ও তো হিরোয়েঞ্চি। মানে হিরোইন সেবক। কী চমৎকার যুক্তি হিরোইন সেবক তাই ছেড়ে দিতে হবে! কথা আর বাড়ালাম না। তবে আমি নিশ্চিত ওসি মহসিনের আমলে হলে আমি আমার মোবাইলটি ফিরে পেতাম।
এ ধরনের গল্প যারা শহরে চলাফেরা করেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই আছে। আর যে জায়গাগুলোতে এই ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো অনেক আগে থেকে ছিনতাইয়ের স্পট হিসাবে চিহ্নিত। যেমন আপনি টাইগারপাস দিয়ে সকালে কিংবা দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায় হেঁটে বা রিক্সায় আসতে পারবেন না। নিশ্চিত ভাবে ছিনতাই হবেন। আর চেষ্টা করলে স্টেশন রোডের চোরাই মোবাইল মার্কেটে নিজের মোবাইল নিজেই কিনে নিতে পারবেন। যদিও ততক্ষণে আপনার মোবাইলের ওপেন হার্ট সার্জারী হয়ে গেছে! এই গল্পগুলো থেকে প্রশ্ন অনেক। প্রথমত একই স্পটে বারবার ছিনতাই হয় কী করে? কেন সেই স্পটগুলো চেক দেয়া হয় না? এমনও দেখা গেছে একই ছিনতাইকারী জেল থেকে মুক্ত হয়ে একই এলাকা থেকে আবার ছিনতাই করেছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে সবাই জানে স্টেশন রোডের চোরাই মার্কেটের খবর। তারপরও এই চোরাই মার্কেট বহাল তবিয়তে চালু থাকে কীভাবে? এমনও শুনেছি ঐ চোরাই মার্কেট থেকে মোবাইল কিনে দু‘কদম যাওয়ার সাথে সাথে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন ক্রেতা। আসলে এর থেকে ধারণা করা যায় কত গভীর সিন্ডিকেট।
আসলে সবকিছুর মূলে মাদক। মাদকের বিষাক্ত ছোবল সবকিছুকে যেন ক্রমেই গ্রাস করছে। যারা ছিনতাই করে তারা ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে বিল্ডিং বানায় না। মাদকের নেশা মেটাতে আপনার ৪০ হাজার টাকা দামী মোবাইলটি চার পাঁচশো টাকা বেঁচে দেয়। মাদক ব্যবসায়ীদের বিশাল সিন্ডিকেট। তাদের অনেকেই সমাজের গন্যমান্য এবং নীতিনির্ধারক। তাদেরকে ঘাঁটায় এমন সাহস কার! তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে শিশু কিশোর এবং নারীদেরকে মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত করছে। স্টেশন রোডে গেলে দেখবেন শিশুকিশোররা কিভাবে পলিথিনে গাম ঢুকিয়ে নেশা করে। দিন দিন বাড়ছে সার্থপরতা। এই অবস্থা কি চলতে থাকবে নাকি পরিবর্তন দরকার! সবাইকে বলি একবার অন্তত চোখ খুলে আশেপাশে দেখুন। এই ভয়ংকর অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকলে দিনের আলোয় দেখতে হবে রাতের অন্ধকার।