বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামজুড়ে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে করে নগরীর নিছু এলাকাগুলোতে জমেছে পানি। এদিকে গভীর নিম্নচাপটি বৃষ্টি ঝরিয়ে আজ শুক্রবার বিকেল নাগাদ বাংলাদেশের খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসাথে উপকূলের কাছাকাছি থাকায় গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গভীর নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এরপ্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। বৃহস্পতিবার (গতকাল) দিবাগত রাতে বৃষ্টি কমলেও শুক্রবার (আজ) সকাল থেকে বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টি হতে পারে। শনিবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে।’
এদিকে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে চট্টগ্রাম জুড়ে কোথাও বৃষ্টি, কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনভর বৃষ্টির কারণে নগরীর বেশ কিছু নিচু এলাকায় পানি জমেছে। বিশেষ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা স্থানগুলোতে রাস্তায় পানি জমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। নগরীর আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাকলিয়াও আশেপাশের এলাকায় রাস্তায় পানি জমে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ২২ অক্টোবর বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) বলছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রায় একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আগামীকাল (আজ শুক্রবার) দুপুরের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ আকারে বাংলাদেশের খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের সকল সমুদ্রবন্দরকে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে বর্তমানে (গতকাল বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম বিভাগের বেশকিছু স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। উপকূলের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলেও আগামী ২দিন প্রভাব থাকতে পারে।