বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির ৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্মরণ চত্বরে বেলুন–ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। পরে তার নেতৃত্বে স্মরণ চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। বেলা ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেক কেটে দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তিনি। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা সভা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ৫২–এর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই বিপ্লব– এ তিনটি আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবগাঁথা অধ্যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ পথচলায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন আজ বিশ্বে অনন্য। নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, বিশ্ববিখ্যাত ভৌতবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক–শিক্ষার্থী দেশে–বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করছেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর ভঙ্গুর অবস্থায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। অনেক কাজ করেছি কিছু দৃশ্যমান হয়েছে, কিছু ফল পেতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। বিশ্বের পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব বিভাগে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, এমফিল–পিএইচডির নীতিমালা পরিবর্তন এবং গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি এস এম ফজলুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে আমি হাটহাজারী থানার কমান্ডার ছিলাম। আমরা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। শিক্ষাব্যবস্থা বদলে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তবে এখনো আশানুরূপ পরিবর্তন দেখতে পাই না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় আরও সফলতার পথে এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ইকবাল শাহীন খান, শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বেগম ইসমত আরা হক, সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হাসমত আলী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. একেএম মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ), চাকসু ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি, চাকসু জিএস সাঈদ বিন হাবিব, চাকসু এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। সঞ্চালনায় ছিলেন চবি ছাত্র–ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রক্টর ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী। সভাপতির বক্তব্যে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল–আমীন বলেন, ৪টি বিভাগ, ৮ জন শিক্ষক ও ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই চবি এখন একটি বিশাল পরিবার।
বিগত এক বছরে চবি পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শহীদ ফরহাদ হোসেন ও শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়াসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
বিকাল ৩টা থেকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ৬০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়। অনুষ্ঠানমালায় উপস্থিত ছিলেন সিনেট–সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, ডিনবৃন্দ, হল প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেন, বিভাগীয় সভাপতি, গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, সহকারী প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী, চাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দসহ বহু সুধীজন।












