যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদের একটি অংশ বিক্রি করে দায়দেনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ গত সোমবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে জাবেদের মালিকানাধীন ছয়টি আবাসন কোম্পানির কর্তৃত্ব চলে গেছে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের হাতে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে তার বিভিন্ন সম্পদ পরিচালিত হত। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানের পথ ধরে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যে তার বিপুল সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে। টেলিগ্রাফ লিখেছে, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট মিলিয়ে সেখানে তার তিন শতাধিক সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে, যার বাজার মূল্য ১৭ কোটি পাউন্ড।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে সাবেক এই মন্ত্রী যুক্তরাজ্যে এই বিপুল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) গত জুনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করার কথা জানায়।
টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, জব্দ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে উত্তর লন্ডনের সেন্ট জনস উড এলাকায় ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডের একটি বিলাসবহুল বাড়ি এবং মধ্য লন্ডনের ফিটসরোভিয়া এলাকার কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব সম্পদের একটি অংশ বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাজ্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ট থর্নটনের প্রশাসকরা। লন্ডন ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে জাবেদের মালিকানাধীন আবাসিক ভবন রয়েছে এর মধ্যে। এসব সম্পদ বিক্রি থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে জাবেদের ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ করবে কর্তৃপক্ষ। সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ডিবিএস এবং ব্রিটিশ আরব কমার্শিয়াল ব্যাংকও রয়েছে এসব ঋণদাতাদের মধ্যে।
যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসের এক নথিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও ২৬ কোটি পাউন্ডের সমপরিমাণের অর্থ পায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কাছে। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ জবেদের পরিবারের হাতেই ছিল। তার স্ত্রী রুকমিলা জামান ছিলেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। ওই ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশে মামলাও হয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে।
জাবেদ ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। টেলিগ্রাফ লিখেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা যেভাবে যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে।