দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির সংখ্যা এক চতুর্থাংশ

আছে ৫-৭ বছরের পুরনো মামলাও।। চট্টগ্রামের দুটি পারিবারিক আদালতে মামলা ৭৫৫১টি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৯ মার্চ, ২০২২ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

ইয়াসমিন আক্তার (৩০)। খুলশীর আমবাগান ছিন্নমূল কলোনির ছোট্ট একটি ঘরে থাকেন। গার্মেন্টসে কাজ করে পেট চলত। এর মধ্যে ফেনীর আব্দুল মান্নানের সঙ্গে পরিচয়। ২০০৮ সালের ১১ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। ভেবেছিলেন সুখী হবেন। কিন্তু না। বিয়ের পর থেকেই স্বামী আব্দুল মান্নান মজুমদারের নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তি মেলেনি পরিবারের একমাত্র প্রতিবন্ধী শিশুটিরও। মারধরের শিকার হতে হয়েছে তাকেও। একপর্যায়ে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আদালতের শরণাপন্ন হতে হয় ইয়াসমিনকে। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি পারিবারিক আদালতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে দেনমোহর ও খোরপোষ চেয়ে একটি মামলা করেন তিনি।
আদালতে মানুষ যায় প্রতিকার পেতে, অধিকার আদায় করতে। কিন্তু ইয়াসমিন আক্তারের মামলা চলছে ধীরগতিতে। কখন প্রতিকার পাবেন তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তিনি। কারণ, মামলা দায়েরের পর অতিবাহিত হয়েছে আড়াই বছর।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াসমিন আক্তার গতকাল আজাদীকে বলেন, বিয়ের পর থেকে নানা সময় ৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নিয়েছেন আব্দুল মান্নান মজুমদার। আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক চাইলে অপারগতা প্রকাশ
করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি চলে যান। এর আগে তিনি তিনটি বিয়ে করেছেন। এটা জানতাম না। এর মধ্যে খোরপোষ দাবি করলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
ইয়াসমিন আক্তারের আইনজীবী নুরজাহান ইসলাম আজাদীকে বলেন, ধীরগতি পারিবারিক আদালতের বাস্তবতা। তারিখ পড়ে দুই বা তিন মাস পরপর। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে এখান থেকে বের হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পারিবারিক আদালতে যারা মামলা করেন তারা অসহায়। অসহায়ত্ব থেকেই তারা আদালতে মামলা ফাইল করেন। আদালত সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয় বুঝতে হবে। তিনি জানান, ইয়াসমিন আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিলেন। একটি ফৌজদারি, অন্যটি পারিবারিক। দুটি মামলা আমি মোকাবেলা করছি। ফৌজদারি মামলাটি বর্তমানে চার্জগঠনের জন্য শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। পারিবারিক মামলাটি আপোষ মীমাংসার জন্য রয়েছে। আপোষ মীমাংসায় আব্দুল মান্নান অনুপস্থিত থাকলে একতরফাভাবে সিদ্ধান্তে যাবে আদালত।
আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের দুটি পারিবারিক আদালতে বর্তমানে মামলা রয়েছে ৭ হাজার ৫৫১টি। প্রথম আদালতে ৪ হাজার ৪৩৯, দ্বিতীয় আদালতে ৩ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে প্রথম আদালতে ২০২১ সালে নতুন মামলা যুক্ত হয় ৭৬৪টি। দ্বিতীয়টিতে ৫৮৭টি। দুই আদালত মিলে গত বছর মোট ১ হাজার ৩৫১টি নতুন মামলা যুক্ত হয়। অর্থাৎ দুই আদালত মিলে প্রতি মাসে গড়ে মামলা যুক্ত হচ্ছে ১১২টি।
অন্যদিকে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা যুক্ত হওয়া সংখ্যার এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি। ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একতরফা, দোতরফা, এডিআর, খারিজসহ এক বছরে দুই আদালত মিলে মামলা নিষ্পত্তি করেছে ৪৩৯টি। এর মধ্যে প্রথম আদালত ২১১টি, দ্বিতীয় আদালত নিষ্পত্তি করেছে ২২৮টি। অর্থাৎ দুই আদালত মিলে গড়ে প্রতি মাসে মাত্র ৩৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।
কেউ মোহরানা-ভরণপোষণ, কেউ দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, কেউ অভিভাবকত্ব, আবার কেউ বিবাহ বিচ্ছেদ ইস্যুতে পারিবারিক আদালতে এসব মামলা করেছেন। ৬০ দিনের মধ্যে এসব মামলা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে প্রত্যেক কার্যদিবসে বিচারক না থাকা ও বিবাদীপক্ষের বারবার সময় আবেদন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে অন্যতম বাধা।
এসব তথ্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, করোনা যখন ছিল না তখনও এ আদালতের একই অবস্থা ছিল। মামলা হয়, নিষ্পত্তি হয় না। মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও তা শেষ হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। এ আদালতে ৫ বছর, ৭ বছরের পুরনো মামলাও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় হতে হবে, তবে চরিত্র বিসর্জন দেওয়া যাবে না
পরবর্তী নিবন্ধপণ্যের দাম অহেতুক বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা : তথ্যমন্ত্রী