পুকুরটি বেশ বড় নয়। পুকুরের চারিদিকে গাছ গাছালিতে ঘেরা। বিভিন্ন ছোট বড় মাছে ভরপুর পুকুরের পানি। গাছের শাখে শাখে নানা প্রজাতির পাখিরাও বাস করে। মনের সুখে গান গায় পাখিরা। দাড়িয়া মলা পানির উপরে ভেসে ওঠে গান শুনতে। সুযোগ বুঝে শোল মাছ শিকার করে দাড়িয়া মলাকে। শোল মাছের ভয়ে একটু মন খুুিশতে পুকুরে ঘুরে বেড়ানোও দায়। কাছে পেলেই জান নিয়ে ফেরা কঠিন। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।
গাছের শাখে পাখিরা মধুর সুরে গান গায়। শুনতে কত ভালো লাগে। এভাবে পানির উপরে ভেসে ভেসে পাখিদের গান শুনতে গিয়ে আমাদের কত দাড়িয়া মলা শোল মাছের পেটে গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সারা পুকুর জুড়েই শোল মাছের রাজত্ব চলে। আমরা ছোট ছোট মাছ। এত বড় বিশাল দেহি শোল মাছের কাছে আমরা কিছুই না। কারো কাছে অভিযোগ দেব সেই সুযোগও নেই। অন্য যারাও বড় আছে সবাই আমরা ছোটদের আক্রমন করতে পিছপা হয়না।
এভাবেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় আমাদের। আমাদের স্বজাতিরা বেশিরভাগই শোল মাছের আক্রমনের স্বীকার হয় বেশি। কারণ আমরা ছোটরা বিশাল দেহি শোলকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতা নেই।
পুরো পুকুর জুড়েই শোল মাছের বিচরণ। একটু শান্তি মতো ঘুম যাবো এটাও ভয়ে ভয়ে থাকি। কখন আবার শোল মাছের পেটে চলে যেতে হয়। এই নিয়ে সবসময় আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করে। ভাবছি আমরা সব ছোট মাছ বসে কোন একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে দাড়িয়া মলা মাছের বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পুরো পুকুর জুড়ে।
পন্থা একটা বের তো করতে হবে। পন্থা বের করতে হলে তো সবাই কোন এক জায়গায় মিলিত হতে হবে। সবার বুঝ বিবেচনায় কোন একটি পথ বের হবে আশা করি। এই লক্ষ্যে সকল দাড়িয়া মলা মিলে খুব সর্তকতার সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। কোথায় কীভাবে মিলিত হবে। যাতে শোল মাছে এই খবর না জানে। এভাবেই চলছে যোগাযোগ।
পরিশেষে একটি জায়গা মনোনীত করলো। পুকুরের উত্তর দিকে একটি বাঁশ ঘাটের নিচে। যেখানে সবসময় মানুষেরা ঘাটে আসা যাওয়া করে নিজেদের প্রয়োজনে। আমরা দাড়িয়া মলা ছোট মাছ বলে কারো নজরে তেমন পড়ে না। মানুষের ভয়ে শোল মাছ ঘাটের আশেপাশে যায় না। সুযোগটা কাজে লাগাবে দাড়িয়া মলা মাছ। তবে মিলিত হওয়ার সময়টা ঠিক করেছে দিনের শুরুতে সকালের দিকে। তখন মানুষের আনাগোনা থাকে বেশি তাই শোল মাছ আসে না কাছে। রাতের ক্ষণে শোল মাছ ঘুরে বেড়ায় পুরো পুকুর। তাই সকালটাই নিরাপদ।
তবুও সবসময় মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। শোল মাছ কখন আক্রমন করে বসে। নির্ধারিত সকালে প্রায় সকল দাড়িয়া মলা মাছ মিলিত হতে শুরু করলো ঘাটের নিচে। কাউকে কাউকে ঘাটের চারিদিকে নজর রাখতে পাহারায় রাখলো। যেন কোন বড় মাছ ঘাটের দিকে আসলে জানিয়ে দিতে পারে। ধীরে ধীরে একেক মাছে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করছে। সবাই আগ্রহ ভরে শুনছে। যার মতামত সবার পছন্দ হবে সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা হবে।
এক ছোট মলা মাছ প্রস্তাব রাখলো। যখন মানুষেরা বড়শিতে কোন পুটি মাছ আঁটকিয়ে ফাঁদ বসায় শোল মাছের জন্য। তখন আমরা দাড়িয়া মলা ঝাঁক বেঁধে অই বড়শির আশেপাশে খেলা করবো। আমাদের দেখে শোল মাছ তাড়াতাড়ি খেতে আসবে লোভে। আঁটকানো পুটি মাছ থাকবে ঠিক মাঝখানে। শোল মাছ যখন খাবার জন্য ঝাঁপ মারবে দ্রুত সরে যাবো আমরা। তখন পুটি মাছ আঁটকা থাকায় শোল মাছ ওকেই খেতে চাইবে। পুটি মাছ বড়শিতে আঁটকা থাকার ফলে শোল মাছও আঁটকা পড়বে বড়শিতে। যখনি আঁটকা পড়বে তখন আমরা উল্লাস করবো খুশিতে। যদিও দুয়েকটি দাড়িয়া মলা শোলের পেটে যেতেও পারি। তবুও পুরো দাড়িয়া মলা মাছের জীবন রক্ষায় কারো প্রাণ গেলেও সবাই রাজি।
এই সিদ্ধান্তে সবাই রাজি। সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন মানুষে শোলের জন্য বড়শি বসাবে। এভাবে দিন যেতে যেতে অপেক্ষার অবসান হলো একদিন। পুকুরের দক্ষিণ কোণে বেত ঝাড়ের ফাঁকে পুটি মাছ আঁটকিয়ে বড়শি বসাল। পুরো পুকুরের দাড়িয়া মলা একত্রে এসে অই পুটিকে ঘিরে ধরলো। শোল মাছ আসবে আসবে অপেক্ষায় সবাই। কোন এক ফাঁকে এসে ঝাঁপটা মেরে অনেক গুলো দাড়িয়া মলা পেটে চালান করে দিল।
তবুও কেউ ওখান থেকে এক বিন্দু সরলো না। এভাবে কয়েকবার ঝাঁপটা মেরে খাওয়ার পর পুটিকে খেতে গিয়ে আঁটকে গেল বড়শিতে শোল মাছ। জীবন বাঁচাতে কী লাফা লাফাচ্ছে বিশাল দেহি শোল মাছ। বড়শি বসানো মানুষটা দেখে তুলে নিয়ে গেল শোল মাছকে বড়শি সহ। অনেকের জীবন গেলেও আজ থেকে স্বাধীন বলা যায়। অন্য মাছেরা আক্রমন করলেও খুব কম। খুব ভয়ংকর ছিল এই শোল মাছ। আজ সবার আনন্দের দিন। পুরো পুকুর এখন থেকে ঘুরে বেড়ানো যাবে। সেই দিন থেকে দাড়িয়া মলা মাছ গুলো ভয়হীন জীবন যাপন করছে পুরো পুকুর জুড়ে।