চাল-ডালের পর এবার নতুন করে ঝাঁঝ বেড়েছে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের। আমদানি শুল্ক কমানোর পরেও এভাবে দরবৃদ্ধির কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ভোগ্যপণ্যের বাজার না বাড়লেও দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের মূল্য বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পণ্যের আমদানি ব্যয়। অন্যদিকে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে পণ্য পরিবহন খাতে প্রভাব পড়েছে। ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে সেটিও পণ্যের মূল্যের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
গতকাল সোমবার নগরীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রসুনের দাম। চীনা রসুন কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। এছাড়া পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা এবং আদার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। অন্যদিকে মোটা মশুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অপরদিকে বোতলজাত রূপচাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬০ টাকা, ২ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৩১৫ টাকা, ৩ লিটার ৪৭০ টাকা এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। তবে কমেছে চিনির বাজার। চিনির কেজি ৬ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। অপরদিকে সমপ্রতি কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠলেও পাইকারী ও খুচরা উভয় বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাবে খুচরা বাজারে চালের দাম ২-৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে জিরাশাইল সিদ্ধ চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ২ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, মোটা সিদ্ধ চাল ৩ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা এবং পাইজাম সিদ্ধ ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা, কাটারি আতপ ২ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজীর দেউরি এলাকার ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর গত এক সপ্তাহ পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বাড়ছে। আগে থেকে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল-ডাল ও তেল। তবে চিনির বাজার এখন নিম্নমুখী। পাইকারীতে দাম বেড়েছে তাই খুচরাতেও এর প্রভাব পড়েছে। পাইকারীতে দাম কমে গেলে আমরাও দাম কমিয়ে দিব।
গিয়াস উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, খরচের সাথে কোনো আয়ের সমন্বয় করতে পারছি না। করোনার কারণে চাকরিতে গত দুই বছরে এক টাকাও বেতন বাড়েনি। খরচ কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। সরকারের কোনো সংস্থা অভিযান চালাতে গেলেও তাদের বাঁধার মুখে পড়তে হয়। কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ১ ডলার বাড়লেও সাথে সাথে তারা দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ যেসব পণ্যের দাম তারা বাড়িয়ে দেন, সেগুলো কিন্তু আগে আমদানি করা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং রেট কমে গেলে তখন কিন্তু তারা পাইকারি বাজারে দাম কমিয়ে দেয় না। তাছাড়া, যাদের বাজার মনিটরিং করার কথা, তারা সেভাবে মাঠে নেই। এতে কিন্তু ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা সুবিধাটা নিয়ে থাকে।